দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক কৌশল ও কূটনৈতিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে বাংলাদেশ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদায়ের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নেতৃত্বে আসার পর থেকেই কৌশলী পররাষ্ট্রনীতির মধ্য দিয়ে নতুন করে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করছে ঢাকা। আর এ পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি চাপে ফেলেছে নয়াদিল্লিকে।
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশকে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে দেখেছে। সীমান্ত চুক্তি, নিরাপত্তা সহযোগিতা ও ট্রানজিট সুবিধায় বাংলাদেশ বরাবরই ভারতের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার বহুমুখী এবং ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতির পথে হাঁটছে। এখন আর শুধু দিল্লিই নয়—যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও সৌদি আরবের সঙ্গেও সমান গুরুত্ব দিয়ে সম্পর্ক গড়ে তুলছে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ভারতের একচেটিয়া প্রভাব বজায় রাখতে ভূমিকা রাখলেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সেই কাঠামো ভেঙে আঞ্চলিক হাব হিসেবে নিজেদের পুনর্গঠন করছে। পাকিস্তানের সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন, চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে অংশগ্রহণ ভারতের জন্য বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (SIPRI) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ সামরিক সরঞ্জাম আসে চীন থেকে। রাডার সিস্টেম, যুদ্ধজাহাজ, মিসাইলসহ উন্নত সামরিক প্রযুক্তির প্রবাহ দিল্লিতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
এদিকে, সৌদি আরব বাংলাদেশে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী, আর যুক্তরাষ্ট্র ঢাকাকে ইন্ডিয়ান ওশেন সিকিউরিটি পার্টনার হিসেবে দেখতে চায়। এইসব উদ্যোগ ভারতের দীর্ঘদিনের একচেটিয়া সুবিধা কেড়ে নিতে পারে বলেই আশঙ্কা করছে বিশ্লেষক মহল।
পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটেও স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে ঢাকা। ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণ ছাড়া আলোচনা নয়—এই অবস্থান পাকিস্তানকে শর্তে রাজি হতে বাধ্য করছে।
বর্তমান পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের একাধিপত্যের অবসান ও একটি নতুন শক্তিশালী বাংলাদেশের উত্থানকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবস্থান ধরে রাখতে হলে ঢাকা সরকারকে নিতে হবে আরও পরিশীলিত ও দূরদর্শী কূটনৈতিক পদক্ষেপ।
Leave a Reply