যুক্তরাষ্ট্রসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘ধীরে চলা’ কৌশলকে সময়োপযোগী এবং ইতিবাচক বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। সাম্প্রতিক সময়ের কূটনৈতিক সফর ও দ্বিপক্ষীয় আলোচনার প্রেক্ষাপটে তারা এই মূল্যায়ন তুলে ধরেন।
গত সপ্তাহে ঢাকায় সফর করেন দুই মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী—নিকোল চুলিক এবং অ্যান্ড্রু হেরাপ। তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের আওতায় এটিই ছিল বাংলাদেশে তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর, যা উভয়পক্ষ গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে।
বাংলাদেশের শুল্কনীতি ও বাণিজ্য ঘাটতির ইস্যুতে সরাসরি প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে ওয়াশিংটনের কাছে ৯০ দিনের সময় চেয়ে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে ঢাকা। এই ধীর, কিন্তু কাঠামোবদ্ধ কূটনৈতিক পদক্ষেপকে অনেকেই পররাষ্ট্রনীতির পরিপক্কতা হিসেবে দেখছেন।
অন্যদিকে, দীর্ঘ ১৫ বছর পর পাকিস্তানের সঙ্গে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বসেছে বাংলাদেশ, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, শিক্ষা, কৃষি ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। পাকিস্তানের সঙ্গে এই সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে প্রশ্ন উঠলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েই ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক আসিফ মুনীর বলেন, “বাংলাদেশ এখন যে কৌশল নিচ্ছে তা সঠিক পথে এগোচ্ছে। মার্কিন প্রস্তাবের প্রতি তাৎক্ষণিক না বলার বদলে কৌশলগত সময় নেয়া হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের কূটনৈতিক আলাপকে আরও দৃঢ় করবে।”
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, “আমরা এখন আত্মসচেতনভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথে এগোচ্ছি। সব দেশের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ ও সমতাভিত্তিক সম্পর্ক গড়তে চাই আমরা। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলেও এতে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই, যদি আমরা জাতীয় স্বার্থকে সামনে রাখি।”
বিশ্লেষকদের মতে, কৌশলগতভাবে ‘ধীরে চলা’ পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক অবস্থানে পৌঁছে দিচ্ছে, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ক্ষেত্রে দেশটির অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।
Leave a Reply