একসময় হাড়ভাঙা পরিশ্রমের প্রতীক ছিল রিকশা চালানো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে চিত্র। এখন ইঞ্জিন ও ব্যাটারির জোরে চালকেরা আরামেই রাস্তায় চলাচল করছেন। তবে এ সুবিধার পেছনে লুকিয়ে আছে ভয়াবহ সড়ক ঝুঁকি। রাজধানীর অলিগলি থেকে শুরু করে মূল সড়ক ও মহাসড়ক পর্যন্ত এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজি বাইক।
চালকদের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, তারা অধিক যাত্রী পাওয়ার আশায় ছোট রাস্তাগুলো ছেড়ে বড় সড়কে নেমে পড়ছেন। কিন্তু এই যানবাহনগুলোর নেই কোনো নিবন্ধন, নেই মানসম্মত কাঠামো, আর নিয়ন্ত্রণ বলতে গেলে একেবারেই অনুপস্থিত। ফলে দেখা দিচ্ছে ঘনঘন দুর্ঘটনা। বাসচালকদের অভিযোগ, ব্যাটারিচালিত রিকশা হঠাৎ করেই সামনে ঢুকে পড়ে, যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিক ঈদে ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার ৩২ শতাংশই এই ধরনের যানবাহনের কারণে। যদিও হাইকোর্ট ২০১৪, ২০১৭ এবং ২০২১ সালে তিনবার এই রিকশাগুলো নিষিদ্ধের নির্দেশ দেয়, বাস্তবে সেগুলো সড়ক থেকে সরানো সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ গত বছর নভেম্বরেও উচ্চ আদালত তিনদিনের মধ্যে চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিলেও, সরকারের পিছু হটতে হয়েছে চালকদের প্রতিবাদের মুখে।
সরকারি কোনো নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান না থাকলেও বেসরকারি সূত্র বলছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৪৮ থেকে ৫০ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। কোনো নিয়মনীতি বা নিবন্ধন ছাড়াই এই বাহনগুলো আমদানি ও বিক্রি বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ প্যাডেল রিকশায় ব্যাটারি ও মোটর সংযোজন করেই এগুলো রাস্তায় নামানো হচ্ছে। অথচ এসব কাঠামো ৩০-৪০ কিমি বেগে চলার জন্য উপযুক্ত নয়। ভারসাম্যের অভাব, দুর্বল ব্রেক ও সাসপেনশন সিস্টেমের কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
বিআরটিএ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত দায়িত্বপ্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এই বিশৃঙ্খলার মূল কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবিলম্বে এই যানবাহনের নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা না হলে ভবিষ্যতে এটি রাজধানীর জন্য এক বড় সংকটে পরিণত হবে।
Leave a Reply