স্টর্ম বাইরনের আঘাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় অন্তত ১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একাধিক শিশু রয়েছে। প্রচণ্ড বাতাস, টানা ভারী বৃষ্টি ও দুর্বল স্থাপনা ধসে পড়ার ফলে ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুত হাজারো মানুষের দুর্ভোগ আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
গাজার স্বরাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় জানায়, শুক্রবার ভোর পর্যন্ত ঝড়ের কারণে একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে। উত্তর গাজার বির আন-নাজা এলাকায় বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দেওয়া একটি বাড়ি ধসে পাঁচজন নিহত হন। গাজা সিটির রেমাল এলাকায় দেয়াল ধসে পড়ে তাঁবুর ওপর—এতে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়।
এর আগে শাতি শরণার্থী শিবিরে একটি ভবন ধসে একজন নিহত হন। দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায় প্রচণ্ড শীতের কারণে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
গাজার হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডাজনিত মৃত্যু আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আল-শিফা হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, গাজা সিটির পশ্চিমাঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্রে ৯ বছর বয়সী হাদিল আল-মাসরির মৃত্যু হয়। একইভাবে শাতি ক্যাম্পে মারা যায় শিশু তাইম আল-খাওয়াজা।
খান ইউনিসে আট মাস বয়সী রাহাফ আবু জাজারের মৃত্যু হয়, যখন ভারী বৃষ্টিতে তার পরিবারের তাঁবু পানিতে ডুবে যায়। স্বজনদের ভাষ্য, ইসরায়েলি হামলায় নিজ বাড়ি ধ্বংস হওয়ার পর পরিবারটি ছাদহীন একটি ভাঙা ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল।
আল জাজিরার প্রতিবেদক ইব্রাহিম আল-খালিলি জানান, ঝড়ের কারণে অস্থায়ী তাঁবুগুলো এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার মানুষ, যাদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক শিশু রয়েছে, ৭৬১টি আশ্রয়কেন্দ্রে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, “ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ে তাঁবু ধ্বংস হয়ে গেছে। পরিবারগুলোর যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। যুদ্ধ শেষ হলেও যেন নতুন এক যুদ্ধ শুরু হয়েছে—প্রকৃতির বিরুদ্ধে।”
গাজা সিটিতে আল জাজিরার আরেক প্রতিবেদক হিন্দ খোদারি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১০টি বাড়ি ধসে পড়েছে। প্রয়োজনীয় ত্রিপল, তাঁবু ও শীতকালীন সহায়তা না থাকায় মানুষ বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই অবস্থান করছে। তার ভাষায়, “এই মুহূর্তে গাজার বেশিরভাগ মানুষ কার্যত গৃহহীন।”
ঝড় শুরুর পর থেকে জরুরি সেবাদানকারী সংস্থাগুলো ৪,৩০০-এর বেশি সাহায্যের আবেদন পেয়েছে। সীমিত সরঞ্জাম ও জ্বালানি সংকটের মধ্যেও উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে সিভিল ডিফেন্স ও পুলিশ।
এদিকে হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেন, ঝড়জনিত এসব মৃত্যু গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়েরই ধারাবাহিকতা। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জরুরি সহায়তা ও নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.