সুদানের চলমান গৃহযুদ্ধের উত্তাপ এবার ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ সুদান সীমান্তবর্তী হেজলিগ তেলক্ষেত্রে। দেশটির প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে পরিচিত এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় প্রথমবারের মতো অভিনব এক ‘ত্রিপক্ষীয় চুক্তি’র ভিত্তিতে দক্ষিণ সুদানের সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
বুধবার এ মোতায়েন সম্পন্ন হয়। এর আগে ৮ ডিসেম্বর সুদানের আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF) হেজলিগ দখল করে নেয়। ফলে সরকারি বাহিনী সুদানিজ আর্মড ফোর্সেস (SAF) পিছু হটে দক্ষিণ সুদানে প্রবেশ করে এবং অস্ত্র জমা দেয় বলে জানা যায়।
সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগের পর সিদ্ধান্ত হয়—
• কর্মীদের নিরাপদ সরিয়ে নেওয়া হবে
• কোনো ধরনের সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো হবে
• তেলক্ষেত্র ও সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলো যেন কোনো ক্ষতির মুখে না পড়ে তা নিশ্চিত করা হবে
স্থানীয় গোত্রনেতারাও সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখেন।
এই সেনা মোতায়েনের ভিত্তি ছিল দুই দেশের আগের তেল–নিরাপত্তা চুক্তি, যেখানে তেলক্ষেত্র, পাইপলাইন, পাম্পিং স্টেশনসহ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা ছিল। নতুন সংযোজন হলো RSF এর সম্পৃক্ততা।
দক্ষিণ সুদানের সেনাপ্রধান পল নাং হেজলিগে জানান—
এই মোতায়েন প্রেসিডেন্ট সালভা কির, SAF প্রধান আল-বুরহান এবং RSF নেতা হেমেদতির মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অংশ। এর অধীনে দুই সুদানি পক্ষকেই এলাকা ছাড়তে হবে।
তিনি বলেন,
“হেজলিগকে সম্পূর্ণভাবে যেকোনো সামরিক অভিযানের বাইরে রাখা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এটি দক্ষিণ সুদান ও সুদান—দুই দেশের অর্থনীতির প্রাণ।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হেজলিগে এক প্রাণঘাতী ড্রোন হামলায় ডজনখানেক মানুষ নিহত হয়, যার মধ্যে তিনজন দক্ষিণ সুদানি সেনা ছিল। SAF স্বীকার করেছে যে হামলাটি RSF যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে চালানো হয়।
স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী,
• ৭ জন গোত্রনেতা
• অসংখ্য RSF সদস্য
হামলায় নিহত হয়েছেন।
হেজলিগ ছাড়ার পর প্রায় ৩,৯০০ সুদানি সেনা দক্ষিণ সুদানের রুবকোনা কাউন্টিতে ঢুকে ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও আর্টিলারি দক্ষিণ সুদানের কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়। একই সঙ্গে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষও সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
হেজলিগে রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধা, যা দক্ষিণ সুদানের দৈনিক ১,৩০,০০০ ব্যারেল তেল রফতানির সক্ষমতা রাখে। এখানে অবস্থিত ব্লক-৬, যা সুদানের সবচেয়ে বড় উৎপাদন ক্ষেত্র।
বিশেষজ্ঞদের মতে,
SAF চায় না যে RSF নতুন কোনো আর্থিক উৎস পেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠুক। পাশাপাশি RSF SAF–এর বিমান হামলা ঠেকাতে সক্ষম নয়—ড্রোন হামলায় সেটিই স্পষ্ট হয়েছে।
RSF এখন দারফুর থেকে কোরদোফান অঞ্চল পর্যন্ত তাদের নিয়ন্ত্রণ বিস্তৃত করছে। দারফুরে এল-ফাশের পতনের পর আন্তর্জাতিক মহল ব্যাপক নৃশংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
• উদ্বাস্তু শিবিরগুলোর অবস্থা ভয়াবহ
• নতুন শরণার্থীরা আসছে প্রতিদিন
• জাতিসংঘ আবারও গণহত্যার আশঙ্কা করছে
শুধু এই সপ্তাহেই দক্ষিণ কোরদোফান থেকে ১,০০০ এর বেশি মানুষ পালিয়েছে। রাজধানী কাদুগলির দিকেও লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে।
সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক জানিয়েছে—RSF ডারফুরের বিভিন্ন কারাগারে ১৯,০০০-এর বেশি মানুষকে আটকে রেখেছে, যাদের মধ্যে ৭৩ জন চিকিৎসাকর্মী।
অতিরিক্ত ভিড়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও চিকিৎসাহীনতার কারণে কলেরা ছড়াচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে একাধিক মৃত্যু ঘটছে চিকিৎসা বঞ্চনার কারণে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.