ভারতের মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়নীর সাম্প্রতিক উচ্ছেদ অভিযানে গভীর উদ্বেগ ছড়িয়েছে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে। বছরের শুরুতেই, গভীর রাতে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয় প্রায় ২৫০টি বসতবাড়ি, দোকানপাট এবং শতাব্দী প্রাচীন একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এক রাতেই খালি করে ফেলা হয় প্রায় ৫২৭ একর জমি, যার মালিক ছিল মধ্যপ্রদেশ ওয়াকফ বোর্ড।
স্থানীয় মুসলিমদের দাবি, এই জমি দীর্ঘদিন ধরে মুসলিমদের ধর্মীয় ও সামাজিক ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত ছিল। সেখানে ছিল একটি কবরস্থান এবং প্রাচীন মসজিদ। এমনকি ১৯৮৫ সালের একটি সরকারি নথিতেও এসব স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তবে প্রশাসন কোনো আগাম নোটিশ না দিয়ে উচ্ছেদ শুরু করে এবং কোনো পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও নেয়নি।
এই ঘটনাকে ঘিরে নতুন করে আলোচনায় এসেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সদ্য পাস হওয়া বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল। বিলটি অনুযায়ী, এখন থেকে ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনা বোর্ডে অমুসলিম সদস্যও রাখা বাধ্যতামূলক, এবং সরকারের মালিকানা যাচাই ও হস্তক্ষেপের ক্ষমতাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
সরকার বলছে, এই পদক্ষেপ দুর্নীতি প্রতিরোধে নেওয়া হয়েছে। তবে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডসহ মুসলিম সংগঠনগুলো এটিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নতুন হস্তক্ষেপ ও ধর্মীয় নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে দেখছে। তাদের আশঙ্কা, এই আইনের অপব্যবহার করে ভবিষ্যতে ঐতিহাসিক মসজিদসহ বহু ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হতে পারে।
ভারতে বর্তমানে ৪,৭২০০০-এর বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে, যার জমির পরিমাণ প্রায় ৩৮ লাখ একর এবং বাজারমূল্য প্রায় ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেনাবাহিনী ও রেলওয়ের পর ওয়াকফ বোর্ডগুলোর হাতেই রয়েছে ভারতের সবচেয়ে বেশি নগর জমির মালিকানা। এসব সম্পত্তি মূলত ব্যবহৃত হয় মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও এতিমখানার মতো ধর্মীয় ও সামাজিক উদ্দেশ্যে।
উজ্জয়নীর ঘটনাটি শুধুই কি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি শুরু হলো আরও কিছু বড় পরিকল্পনার? এই প্রশ্ন এখন ভারতের ২০ কোটিরও বেশি মুসলমানের মনে তীব্র আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে। ধর্মীয় সহনশীলতা ও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।
Leave a Reply