ইসরায়েল ও হামাস যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজা যুদ্ধের অবসান-সংক্রান্ত যে বহুধাপের রোডম্যাপ চলছে, তার দ্বিতীয় ধাপে এগোতে শুরু করেছে—তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে গাজায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর ভূমিকা ও ক্ষমতা নিয়ে।
রোববার হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা বাসেম নাঈম জানান, যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া পরিকল্পনায় বহু বিষয়ের ব্যাখ্যা প্রয়োজন। তিনি বলেন, চলমান যুদ্ধবিরতির সময় অস্ত্র “সংরক্ষণ বা হিমায়িত” করার বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে, তবে কোনো আন্তর্জাতিক বাহিনীকে নিরস্ত্রীকরণের দায়িত্ব দিতে হামাস রাজি নয়।
তার ভাষায়, হামাস জাতিসংঘের একটি বাহিনীকে সীমান্তের কাছে অবস্থান করে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করতে স্বাগত জানাবে, কিন্তু ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে তাদের “কোনো ধরনের ম্যান্ডেট” গ্রহণযোগ্য নয়।
এর কিছুক্ষণ পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, মাসের শেষে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তিনি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা করবেন। এই ধাপে মূল লক্ষ্য হবে হামাসের শাসন ক্ষমতা শেষ করা এবং গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ করা।
নেতানিয়াহুর ভাষায়, “এটি আরও কঠিন ধাপ। হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে, গাজাকে নিষ্ক্রিয় করতে হবে।”
তবে হামাস নেতার অস্ত্র “সংরক্ষণ”–সংক্রান্ত মন্তব্য ইসরায়েলের পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের দাবি পূরণ করবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। নাঈম বলেন, হামাস প্রতিরোধের অধিকার ধরে রাখবে, এবং অস্ত্র সমর্পণের আলোচনায় যেতে পারে কেবল একটি পূর্ণাঙ্গ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে—সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি ৫ থেকে ১০ বছরের যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষাপটে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্লুপ্রিন্টে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ রাখা হলেও নেতানিয়াহু বহুবার জানিয়েছেন—এটি হামাসকে পুরস্কৃত করার সমতুল্য, তাই তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণা প্রত্যাখ্যান করছেন।
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠন, একটি টেকনোক্র্যাটিক ফিলিস্তিনি প্রশাসন এবং আন্তর্জাতিক ‘বোর্ড অব পিস’–এর ধারণা থাকলেও সময়সীমা, বাহিনীর কাঠামো ও ক্ষমতা—কিছুই স্পষ্ট নয়।
ইন্দোনেশিয়া সৈন্য পাঠানোর আগ্রহ দেখালেও বাহিনী গঠন প্রক্রিয়া অগ্রসর হয়নি।
নেতানিয়াহুও পরিকল্পনার অস্পষ্টতা স্বীকার করেন:
“কোন দেশগুলো বাহিনী পাঠাবে, সময়সীমা কী হবে, আন্তর্জাতিক বাহিনী না এলে বিকল্প কী—এসব বিষয় এখনো আলোচনায়।”
প্রথম ধাপের অংশ হিসেবে ইসরায়েল তাদের বাহিনীকে গাজার একটি তথাকথিত ‘হলুদ লাইন’-এর পেছনে সরিয়ে নিয়েছে। যদিও তারা এখনো গাজার ৫৩ শতাংশ ভূখণ্ডের কার্যত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
রোববার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল ইয়েল জামির ঘোষণা করেন—“হলুদ লাইন এখন নতুন সীমান্ত, যা আমাদের প্রতিরক্ষা ও সামরিক কার্যক্রমের অগ্রবর্তী লাইন হিসেবে থাকবে।”
অন্যদিকে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আল–থানি সতর্ক করে বলেন—যুদ্ধবিরতি এখন “অত্যন্ত নাজুক পর্যায়ে”, এবং স্থায়ী সমাধানের দিকে দ্রুত অগ্রগতি না হলে এটি ভেঙে পড়তে পারে।
তিনি জানান, পূর্ণ ইসরায়েলি প্রত্যাহার, স্থিতিশীলতা এবং ফিলিস্তিনিদের চলাচলের স্বাধীনতা ছাড়া প্রকৃত যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়।
এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সম্পর্ক পুনর্গঠনের আলোচনায় বসেছেন—বিশেষ করে সেপ্টেম্বরের ইসরায়েলি হামলায় দোহার ওপর চাপ বেড়ে যাওয়ার পর, অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.