ইসরায়েল রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং শুধু গাজাবাসীদের বের হওয়ার পথ হিসেবে খুলে দেওয়ার যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, তা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে আরব ও মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ আট দেশ। দেশের মন্ত্রীদের ভাষ্য—এটি স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনিদের নিজভূমি থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা, যা যুদ্ধবিরতির শর্ত ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার লঙ্ঘন করে।
শনিবার এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে—
মিসর, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, তুর্কী ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
তাদের কথায়, রাফাহ সীমান্তকে শুধু একমুখী করে ফেলা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ, এবং ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনার অংশ।
ইসরায়েলের সামরিক ইউনিট কোগাট (COGAT) বুধবার ঘোষণা করেছিল যে রাফাহ ক্রসিং শিগগিরই খুলবে, তবে কেবল গাজাবাসীদের মিসরে প্রবেশের জন্য—কোনো মানুষ গাজায় ফিরতে পারবে না, এবং সাহায্য সরঞ্জামও ঢুকতে দেওয়া হবে না।
এ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে তৈরি ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপের স্পষ্ট লঙ্ঘন। ওই পরিকল্পনায় রাফাহ সীমান্ত দুই দিকেই খোলা রাখার নির্দেশ আছে, যেখানে মানুষের চলা ফেরা নিরবচ্ছিন্ন থাকবে , এবং মানবিক সহায়তা নিরবচ্ছিন্নভাবে ঢুকবে।
কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাফাহ বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ। ১০ অক্টোবরের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েল সীমান্ত পুনরায় খোলার ক্ষেত্রে নানা অজুহাত তুলে বিলম্ব করছে—হামাস সব নিহত বন্দির দেহ ফেরত দেয়নি এবং মিসরের সঙ্গে সমন্বয় হয়নি ইত্যাদি দেখিয়ে। বর্তমানে মাত্র একটি বন্দির দেহ গাজায় আছে।
আট দেশের মন্ত্রীরা তাদের বিবৃতিতে—
ফিলিস্তিনিদের ভূমি থেকে সরিয়ে দেওয়ার যেকোনো পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান,
রাফাহ ক্রসিং দুই দিকেই খোলার দাবি,
ও যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা একটি টেকনোক্র্যাট ফিলিস্তিনি সরকার গঠনের বিষয়েও সমর্থন জানায়, যা আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে একটি বহুজাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (International Stabilisation Force – ISF) দ্বারা সহায়তা পাবে।
বিবৃতিতে আরব–মুসলিম দেশগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে গাজায় শাসন দায়িত্ব পুনরায় নিতে দিতে হবে, দীর্ঘমেয়াদী শান্তি নিশ্চিত করতে হবে, এবং ৪ জুন ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমসহ একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করতে হবে।
আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীতে (ISF) অংশ নিতে আগ্রহী আরব দেশগুলো আগেই বলেছিল—ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পরিকল্পনায় স্পষ্ট ভাষা যোগ করতে হবে।
অবশেষে সেই ভাষা যোগ হয় এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পরিকল্পনাটি পাস হওয়ার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের বাধা দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.