বাংলা চলচ্চিত্রের রাজপুত্র, কোটি হৃদয়ের নায়ক সালমান শাহ শুধু রূপালি পর্দার নায়ক ছিলেন না—ছিলেন মানুষের নায়ক। তাঁর জীবন ও ভক্তদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের গল্প আজও মানুষকে আবেগে ভাসায়। মৃত্যুর ২৯ বছর পরও তাঁর লেখা একটি চিঠি আজও প্রমাণ করে, তিনি কতটা বিনয়ী, ভালোবাসায় ভরা একজন মানুষ ছিলেন।
বাংলা সিনেমার ইতিহাসে ‘স্বপ্নের নায়ক’ সালমান শাহ এমন এক নাম, যাকে দর্শক আজও ভুলতে পারেনি। মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি জয় করেছিলেন কোটি হৃদয়। তাঁর সহকর্মীরা বলেন, খ্যাতির চূড়ায় থেকেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত মানবিক ও উদারমনা।
নৃত্য পরিচালক সাইফুল ইসলাম স্মৃতিচারণ করে বলেন—
“সালমান অভিনয়ে যা আয় করতেন, তার বেশিরভাগই খরচ করতেন অসহায় মানুষের জন্য। কোনো প্রোডাকশন বয় বা টেকনিশিয়ান যদি বলতো—‘ভাইয়া, মা অসুস্থ’, তখন পকেটে যা থাকতো, সব দিয়ে দিতো। এমনকি টাকা না থাকলে প্রযোজকের কাছ থেকে অ্যাডভান্স নিয়ে সাহায্য করতো।”
একবারের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন—
“একদিন শুটিংয়ের আগে সালমান বললো, পিৎজা খাবো। হরতালের কারণে গাড়ি বের করতে না পেরে আমরা রিকশায় উঠি। গন্তব্যে পৌঁছে রিকশাচালক বললো—‘ভাই, আজ থেকে আর রিকশা চালাবো না।’ কারণ জিজ্ঞেস করলে জানায়, সে গ্রাম থেকে এসেছিল শুধু সালমান শাহকে একবার দেখার জন্য, টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় রিকশা চালাচ্ছে। সালমান ওর কথা শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে ওকে সঙ্গে নিয়ে পিৎজা খাওয়ায়, ২ হাজার টাকা দেয় এবং বলে—‘আজ থেকে আমি তোমার ভাই, বন্ধু সালমান।’”
এমন অসংখ্য ঘটনার পাশাপাশি সালমান ভক্তদের চিঠিরও উত্তর দিতেন নিয়মিত। ১৯৯৫ সালের ৮ মার্চ, তিনি তাঁর এক ভক্ত ইথেন–এর উদ্দেশে ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিখেছিলেন একটি চিঠি, যা আজও ভক্তদের হৃদয়ে অমূল্য স্মৃতি হয়ে আছে।
চিঠিতে সালমান লিখেছিলেন—
“স্নেহের ইথেন,
আমার অনেক ভালোবাসা ও স্নেহাশিষ নিও।
তোমার চিঠি অনেক আগেই পেয়েছি। কিন্তু অসম্ভব ব্যস্ততার কারণে উত্তর দিতে সামান্য দেরি হয়েছে বলে আমি দুঃখিত।
মাসুম ভাইয়ের কাছে তোমার কথা অনেক শুনেছি। তোমার মতো একজন ভক্ত আমার আছে জেনে সত্যি খুব আনন্দ পাই এবং মনে মনে গর্বও বোধ করি।
তোমাদের মতো অসংখ্য ভক্তদের ভালোবাসাই আমার কাজের প্রেরণা। তোমাদের এই ভালোবাসা আমৃত্যু যেন আমার সাথে থাকে—এই দোয়াই বিধাতার কাছে করি।
ব্যস্ততার কারণে সংক্ষেপে লিখতে হচ্ছে বলে আবারও ক্ষমা চাইছি। ভবিষ্যতে আবারও চিঠি লেখার আমন্ত্রণ রইলো।
ইতি—সালমান শাহ।”
১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন সালমান শাহ। সেই প্রথম সিনেমাতেই তাঁর জনপ্রিয়তা ছুঁয়েছিল আকাশছোঁয়া উচ্চতা। মৃত্যুর পরও তাঁর ভক্তরা বলেন—
“সালমান শাহ মারা যাননি, তিনি আছেন আমাদের হৃদয়ে, আমাদের স্মৃতিতে।”
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.