আফগানিস্তানের কুনার ও সামানগান প্রদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি হারানো মানুষগুলো এখন লড়ছে তীব্র শীত ও বৃষ্টির সঙ্গে। মাথার ওপর স্থায়ী ছাদ নেই, নেই পর্যাপ্ত পোশাক বা শীতবস্ত্র। আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় কঠিন হয়ে পড়েছে জীবনযুদ্ধ।
আফগানিস্তানে একের পর এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা এখন নতুন এক বিপদের মুখে—তীব্র শীত ও বৃষ্টি। সামানগান ও বালখ প্রদেশে সম্প্রতি সংঘটিত ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছেন, শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত। এর মাত্র দুই মাস আগেই দেশটিতে ২,২০০ জনের প্রাণ কেড়েছিল আরেক ভয়াবহ ভূমিকম্প।
সামানগানের খুলুম জেলায় বাসিন্দা গুলাবউদ্দিন হারিয়েছেন তাঁর পুত্রবধূকে। নিজেরও মাথায় আঘাত লেগেছে ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে। তিনি বলেন,
“আমরা সব হারিয়েছি। শীত চলে আসছে। চার ও পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চারা আছে—কোথায় যাব? দুই রাত ধরে আত্মীয়ের ঘরে আশ্রয় নিচ্ছি।”
প্রবল বৃষ্টি ভেঙে দিয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা; কাদায় মিশে গেছে গ্রামের পথ। পূর্ব আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশের পাহাড়ি গ্রাম মাজার দারা–য় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। সেখানে এখনো বহু মানুষ তাঁবুতে দিন কাটাচ্ছেন। বাজারগা সাফায়, ৫০ বছর বয়সী এক কৃষক, বলেন—
“আমাদের তাঁবু শীতের উপযোগী নয়। ১৫ জন মিলে এক তাঁবুতে থাকতে হচ্ছে। বাইরে এখন তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নামছে, শিশুদের ঠান্ডায় কাঁপছে।”
তালেবান সরকারের তথ্য কর্মকর্তা নজিবুল্লাহ হানাফি জানান, গ্রীষ্মকালের ভূমিকম্পের পর দেওয়া সহায়তা এখন যথেষ্ট নয়—
“তখন খাবার ও আশ্রয়ের প্রয়োজন ছিল, এখন দরকার পোশাক, কম্বল ও শীতের সরঞ্জাম।”
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় দাতারা তহবিল প্রত্যাহার করায় আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোও সীমিত সহায়তা দিতে পারছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (IOM) জানিয়েছে, কুনারের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৭৭ শতাংশ মানুষ শীতকালেও সেখানেই থেকে যাবেন, কারণ তাঁদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
মাজার দারায় পুনর্গঠন ধীরগতির। তালেবান কর্তৃপক্ষ নতুন ঘর নির্মাণের দাবি করলেও, সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে দেখা গেছে কেবল একটি বুলডোজার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করছে। স্থানীয় বাসিন্দা সাঈদ ওয়ালি সাফায় বলেন,
“আমাদের ঘর এবার পাথরে নয়, ইট ও কংক্রিটে তৈরি করতে হবে। না হলে আবার ভেঙে পড়বে।”
আফগানিস্তানের এই বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোর এখন সবচেয়ে বড় শত্রু—শীত। ঘরহারা শিশুরা কাঁপছে, বয়স্করা ঠান্ডা আর ক্ষুধার যন্ত্রণা সয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.