বাংলাদেশ গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অর্থপাচারের মারাত্মক শিকার বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তার মতে, দেশের কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও শিল্প গ্রুপের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা। শুধুমাত্র বেক্সিমকো গ্রুপের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি একাই পাচার করেছে আনুমানিক ৫০ হাজার কোটি টাকা।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় ড. মনসুর বলেন,
অর্থপাচার প্রতিরোধে আমাদের দায়িত্ব রোগ সারানোর চেয়ে রোগের উৎপত্তি ঠেকানো। চুরি হয়ে যাওয়ার পর কিছু করার চেয়ে, আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়াই জরুরি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে পাচার হওয়া সম্পদ চিহ্নিত করে তা ‘ফ্রিজ’ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য আন্তর্জাতিক আইনজীবী ও এস্টেট ট্রেসিং ফার্মের সহায়তায় প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রথম ধাপের সাফল্য হিসেবে এসব সম্পদ জব্দ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ড. মনসুর জানান, সম্পদ ফেরত আনার ক্ষেত্রে আদালতের বাইরে আলোচনা ও সমঝোতার (Out of Court Settlement) মাধ্যমে অর্থ ফেরত আনার চেষ্টাও চলছে। তবে এক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণ নিশ্চিত করতে হবে, যেন বাংলাদেশ কোনো ধরনের প্রতারণার শিকার না হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরে কেউ পাচারে জড়িত কি না, এমন প্রশ্নে গভর্নর বলেন, “আমরা কাউকে অকারণে চাকরি হারাতে দেব না। তবে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকলে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দেশের সাম্প্রতিক মুদ্রাস্ফীতি নিয়েও আশাবাদী মনোভাব প্রকাশ করেন গভর্নর। তিনি বলেন, “আগে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ১৩-১৪ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছালেও বর্তমানে তা ৮-৯ শতাংশে নেমে এসেছে। আগামী বছর তা ৫ শতাংশ বা তার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।”
নীতিগত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সময় লাগলেও বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি ও জ্বালানি খাতে পর্যাপ্ত সাপোর্ট নিশ্চিত করেছে বলে জানান তিনি। বোরো মৌসুমে কৃষকদের সার সরবরাহ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রেও ব্যাঘাত ঘটেনি বলেও দাবি করেন গভর্নর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পরিচালক মো. আনিসুর রহমান এবং চট্টগ্রাম কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
Leave a Reply