বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তার দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দিলে লাখো সমর্থক ভোট বর্জন করবেন। ভারতের নয়াদিল্লি থেকে নির্বাসিত অবস্থায় রয়টার্সকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা শুধু অন্যায় নয়, আত্মঘাতীও বটে। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ আওয়ামী লীগের সমর্থক। তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে কোনো নির্বাচনের বৈধতা থাকতে পারে না।”
৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতের নয়াদিল্লিতে নির্বাসনে রয়েছেন। গত আগস্টে ছাত্রনেতৃত্বাধীন এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশ পরিচালনা করছে। সরকার জানিয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রয়টার্সকে পাঠানো ই-মেইল বার্তায় হাসিনা বলেন, “আমরা এখনো আশা করছি সরকার সাধারণ বুদ্ধির পরিচয় দেবে এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেবে। আমাদের সমর্থকদের অন্য কোনো দলকে ভোট দিতে বলছি না।”
বাংলাদেশে বর্তমানে ১২ কোটি ৬০ লাখের বেশি ভোটার রয়েছে। তবে চলতি বছরের মে মাসে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার দলটির সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে, অভিযোগ তোলে জাতীয় নিরাপত্তা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলটির সিনিয়র নেতাদের তদন্তের প্রেক্ষিতে।শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা চলছে। অভিযোগ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালানো হয়েছিল।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সে সময় প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত এবং হাজারো আহত হয়েছিলেন, অধিকাংশই গুলিতে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ মামলার রায় আগামী ১৩ নভেম্বর ঘোষণা করতে পারে বলে জানা গেছে।
হাসিনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এই বিচার একটি রাজনৈতিক প্রহসন। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের যথাযথ সুযোগও দেওয়া হয়নি।”
নির্বাসিত অবস্থায় দিল্লিতে বসবাস করলেও হাসিনা জানিয়েছেন, এখনই দেশে ফেরার পরিকল্পনা নেই। তবে দেশে “গণতান্ত্রিক ও বৈধ সরকার” প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি ফিরতে চান।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের হাতে নির্ভর করে না। সংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলেই দেশ এগিয়ে যাবে।”
শেখ হাসিনা আরও জানান, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় চাইলে ভবিষ্যতে দলের নেতৃত্ব নিতে পারেন, তবে “এটা একান্তই দলের বিষয়।”
গত কয়েক মাসে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটলেও বর্তমানে পরিস্থিতি তুলনামূলক শান্ত। তবে রাষ্ট্র সংস্কার সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে চলতি মাসে ফের সহিংসতা দেখা দেয়।







