ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় গাজা নগরী পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) একদিনেই শহরে কমপক্ষে ৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও প্রায় ৬ হাজার মানুষ। এ নিয়ে গোটা গাজা উপত্যকায় ওইদিন নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২-তে।
গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, “বাসিন্দারা এখন টানা অবরোধ ও বোমাবর্ষণের কারণে চরম দুর্দশার মধ্যে বেঁচে আছেন।”
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ইসরায়েলি বাহিনী দ্রুত একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, লক্ষ্য গাজা নগরী দখল। যুদ্ধবিমান প্রায় প্রতি ১০ থেকে ১৫ মিনিট অন্তর অন্তর বোমা ফেলছে আবাসিক এলাকা ও স্কুল-শেল্টারে, যেখানে হাজারো মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, “এই হামলার ধারা স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে ইসরায়েলি সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোকে চাপে ফেলছে।”
ইসরায়েলি বাহিনী বারবার লিফলেট ছড়িয়ে মানুষকে দক্ষিণে যেতে বলছে। তবে দক্ষিণের আল-মাওয়াসি শিবিরে পানি, আশ্রয় ও খাদ্যের অভাব চরমে পৌঁছেছে। অনেকেই সেখানে গিয়ে ফিরে আসছেন গাজা নগরীতে। বর্তমানে শহরটিতে প্রায় ৯ লাখ মানুষ রয়ে গেছেন।
গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক ড. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, “দক্ষিণে যেতে পারলেও সেখানকার ক্যাম্পগুলো উপচে পড়েছে, অনেকেই ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।
শনিবার ইসরায়েলি বিমান তিনটি জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে বোমা ফেলেছে, যেগুলোতে বাস্তুচ্যুতরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। জীবিত বেঁচে যাওয়া এক ফিলিস্তিনি নারী ফিদা আল-জাআনিন বলেন, “আমরা মাত্র কয়েক মিনিট সময় পেয়েছিলাম। কিছুই সঙ্গে নিতে পারিনি, এখন খালি হাতে শিশুদের নিয়ে টেন্টে বসে আছি।”
একইদিন ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়েছে বুর্জ আল-নুর টাওয়ার এবং জনঅভিযোগ কার্যালয় ভবন। ড্রোন হামলায় আহত হয়েছেন অনেকেই।
কেন্দ্রীয় গাজায় খাদ্য সহায়তা সংগ্রহের লাইনে অন্তত সাতজন নিহত।
বুড়েইজ শরণার্থী শিবিরে কামান হামলায় নিহত একজন।
ফিলিস্তিন স্টেডিয়ামে আশ্রিত শরণার্থী শিবিরে নিহত চারজন।
খান ইউনিসে হামলায় নিহত তিনজন, আহত অন্তত পাঁচজন।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টিজনিত কারণে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে শিশু রয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে শুধু অনাহার ও অপুষ্টিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪২০ জন ফিলিস্তিনি, তাদের মধ্যে ১৪৫ শিশু।
Leave a Reply