গাজা সিটিতে ইসরায়েলের অব্যাহত ভয়াবহ আগ্রাসনে একদিনেই অন্তত ১০৫ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩২ জন ত্রাণ সংগ্রহে আসা সাধারণ মানুষ, শিশু ও সাংবাদিকও রয়েছেন।
মঙ্গলবার সারাদিন ধরে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ আল-সাবরা এলাকায় ভয়াবহ বিমান হামলায় বহু ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, যুদ্ধ এখন “সিদ্ধান্তমূলক পর্যায়ে” পৌঁছেছে এবং যেকোনো মূল্যে গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেবে ইসরায়েল।
আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খৌদারি জানিয়েছেন, “গাজার মানুষ আজ যেন খাঁচার ভেতর বন্দি, যেদিকে যায় সেখানেই বোমা হামলা। তারা শুধু আকাশ থেকে পড়া বোমায় নয়, খাদ্য ও পানির অবরোধেও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।”
মানবিক বিপর্যয় আরও তীব্র আকার নিচ্ছে। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে ১৩ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্ষুধায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬১ জনে, এর মধ্যে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে মাত্র গত ১০ দিনে।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের আল-মাওয়াসি এলাকায় পানি আনার লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় ২১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৭ জন শিশু। ঘটনাস্থলেই পানির কলসি ও শিশুদের লাশ রক্তে ভেসে যায়। অথচ এ এলাকাকেই ইসরায়েল পূর্বে “নিরাপদ অঞ্চল” ঘোষণা করেছিল।
গাজা সিটির আল-আফ পরিবারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আরও ১০ জনকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গাজার সরকারিভাবে বলা হয়েছে, “এটি যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার স্পষ্ট উদাহরণ, যা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।”
সাংবাদিকরাও হামলার শিকার হচ্ছেন। সর্বশেষ হামলায় আল-মানারার সাংবাদিক রাসমি সালেম ও ইমান আল-জামলি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত ২৭০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন—যা ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক প্রেস ওয়াচডগ।
অন্যদিকে, কাতার জানিয়েছে হামাস অস্ত্রবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে, তবে ইসরায়েল এখনো কোনো জবাব দেয়নি। বরং গাজা সিটিতে মানবিক সহায়তা প্রবেশে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ইসরায়েলি সেনাপ্রধান এয়াল জামির বলেছেন, “আমরা স্থল অভিযান আরও গভীর করব।” যদিও ইসরায়েলি গণমাধ্যমে খবর এসেছে, অন্তত ৩৬৫ জন সেনা রিজার্ভিস্ট ডিউটিতে যোগ দিতে অস্বীকার করেছেন।
ইতিমধ্যেই য়াহু দাবি করেছেন, “আমরা হামাসকে পরাজিত করার জন্য কাজ করছি।”
একইসঙ্গে ইয়েমেনের হুথি আন্দোলন দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বন্দর লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, এসব ড্রোন সফলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
এদিকে, বেলজিয়াম আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে স্বাগত জানিয়ে জানিয়েছে, এটি গণহত্যা, উচ্ছেদ ও দখল বন্ধের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তারা বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে দ্রুত আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য, যাতে জনগণ নিজেদের ভূমিতে টিকে থাকতে পারে।
Leave a Reply