ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র সুন্নাত। এটি কেবল পারিবারিক সম্পর্ক নয়, বরং জীবনের পূর্ণতা, পবিত্রতা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির একটি মাধ্যম। একজন উত্তম স্ত্রী কেবল একজন সঙ্গিনী নন—তিনি একজন শান্তির উৎস, একজন আধ্যাত্মিক সঙ্গী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষিকা।
কিন্তু একজন ধর্মপরায়ণা ও উপযুক্ত স্ত্রী পাওয়াটা অনেকের জন্য সহজ নয়। বিশেষ করে বর্তমান সমাজে ক্যারিয়ার, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং পছন্দসই জীবনসঙ্গী না পাওয়ায় অনেকে দেরি করেন বা সংশয়ে থাকেন। ইসলাম এ বিষয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান ও আমলের পথ দেখিয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মাঝে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।”
(সূরা রূম: আয়াত ২১)
রাসূল (সা.) বলেন:
“পুরুষের জন্য উত্তম সম্পদ হলো একজন ধর্মপরায়ণা স্ত্রী।” (সহীহ মুসলিম)
অর্থাৎ, তাকওয়াবান একজন স্ত্রী একজন পুরুষের জীবনকে শুধু সুখময়ই করেন না, বরং আখিরাতের পথও প্রশস্ত করেন।
আল্লাহর কাছে চাওয়া মানেই আশা ও ইমানের বহিঃপ্রকাশ। কুরআন ও হাদীসে কিছু দোয়া ও আমল উল্লেখ আছে যা উত্তম সঙ্গী পাওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ফলপ্রসূ:
কুরআনের দোয়া: উত্তম সঙ্গী ও সন্তানের জন্য
🔸 دُعَاءُ القُرْآنِ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৭৪):
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণ: “রব্বানা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা কুররাতা আয়ুন, ওয়া জা’আলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।”
অর্থ: হে আমাদের রব! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন, যারা আমাদের চোখ শীতলকারী হবে। আমাদের মুত্তাকিদের জন্য আদর্শ করুন।
যারা দীর্ঘ সময় ধরে পাত্র বা পাত্রী খুঁজছেন কিন্তু পাচ্ছেন না, তারা দুই রাকাত সালাতুল হাজত পড়ে এই দোয়াটি পাঠ করতে পারেন। নামাজের পরেও এই দোয়া বেশি বেশি পড়া যেতে পারে।
হজরত মুসা (আ.) যখন সম্পূর্ণ একাকী ও দিশেহারা ছিলেন, তখন তিনি পাঠ করতেন:
فَقَالَ رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
উচ্চারণ: “ফাক্বালা রাব্বি ইন্নি লিমা আনজালতা ইলাইয়্যা মিন খায়রিন ফাক্বির।”
(সুরা কাসাস: আয়াত ২৪)
এটি একান্তভাবে পড়া উত্তম স্ত্রীর আশায় আল্লাহর দরবারে আবেদন হিসেবে বিবেচিত হয়।
দ্রুত বিয়ে বা উত্তম জীবনসঙ্গীর জন্য প্রতিদিন ১১ বার করে সুরা দোহা পড়া অত্যন্ত কার্যকরী বলে অভিজ্ঞ আলেমরা উল্লেখ করেছেন।
فَقُلْ حَسْبِيَ اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ…
আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা রেখে এই আয়াত পাঠ করা হৃদয় প্রশান্তি দেয় এবং আল্লাহর সহায়তা ডেকে আনে।
বিয়ে একটি পবিত্র সম্পর্ক। কিন্তু অনেকেই প্রেম, অবৈধ সম্পর্ক বা দেখাশোনার নামে গুনাহে জড়িয়ে পড়েন—যা ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক অপরাধ। এর ফলে সম্পর্কটি বরকতহীন হয়ে যায়।
📌 রাসূল (সা.) বলেন:
“তোমাদের মাঝে কেউ যদি চরিত্রবান ও দ্বীনদার কাউকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তা গ্রহণ না করলে সমাজে ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে।” (ইবনে মাজাহ: ১৯৬৭)
আল্লাহর দরবারে খাঁটি প্রার্থনাই উত্তম সঙ্গীর পথ খুলে দেয়
উত্তম স্ত্রী বা স্বামী পাওয়া কেবল ভাগ্যের ব্যাপার নয়; এটি নির্ভর করে আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল, দোয়া ও আমলের উপর। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার দোয়া কখনোই অগ্রাহ্য করেন না।
🌙 যারা এখনও উপযুক্ত সঙ্গীর সন্ধানে আছেন, তাদের উচিত নিজেকে শুদ্ধ রাখা, গুনাহ থেকে বাঁচা, দোয়া ও আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। আল্লাহ তাআলা নিশ্চয়ই সবচেয়ে ভালো পরিকল্পনাকারী।
Leave a Reply