গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ভয়াবহ হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৯৫ জন ফিলিস্তিনি। গাজা শহরের একটি ব্যস্ত বাজার ও নুসেইরাত শরনার্থী শিবিরে পানি সংগ্রহ পয়েন্টে চালানো এই হামলায় মৃত্যু মিছিল আরও দীর্ঘ হয়েছে। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৮,০০০ জন, যাদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার (১৩ জুলাই) গাজা শহরের এক বাজারে ইসরায়েলের বোমা হামলায় নিহত হন অন্তত ১৭ জন, যাদের মধ্যে একজন ছিলেন খ্যাতনামা চিকিৎসক ড. আহমেদ কান্দিল। একইদিনে, কেন্দ্রীয় নুসেইরাত শিবিরে একটি পানি সংগ্রহ পয়েন্টে চালানো আরেকটি হামলায় প্রাণ হারান ১০ জন, যাদের ৭ জনই শিশু, যারা কেবল বিশুদ্ধ পানি নিতে গিয়েছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, নুসেইরাতের হামলা মূলত একজন যোদ্ধাকে লক্ষ্য করে করা হয়েছিল, কিন্তু ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটির’ কারণে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে এই দাবির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী ও গবেষক ড. জেসিকা ডরসি। তিনি বলেন, “যুদ্ধের সময় ভুল হতেই পারে, কিন্তু গাজায় একের পর এক বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি দেখে এটাকে ভুল বলা যায় না, এটা তাদের কৌশলেরই অংশ হতে পারে।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, কেবল জুন মাসেই গাজায় অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫,৮০০ শিশু, যাদের মধ্যে ১,০০০ শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সাত মাস বয়সী শিশু সালাম অপুষ্টিতে মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছে UNRWA। সংস্থাটি জানিয়েছে, জ্বালানির ঘাটতি থাকলে হাসপাতাল, পানির সরবরাহ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, “জরুরি সেবাগুলো চালু রাখতে পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ করতে হবে, নইলে আমাদের কার্যক্রম স্থগিত করতে হতে পারে।”
গাজার গণমাধ্যম অফিস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল ও তার সহযোগী নিরাপত্তা ঠিকাদাররা ইচ্ছাকৃতভাবে মানবিক সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)-এর সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোকে “মৃত্যুকূপ” আখ্যা দিয়ে এ ঘটনাকে “মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত গণহত্যা প্রকৌশল” হিসেবে অভিহিত করেছে। মে মাসে GHF কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮০৫ জন নিহত ও ৫,২৫০ জন আহত হয়েছেন সহায়তা নিতে গিয়ে।
দোহায় চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, তিনি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ফাইনালের ফাঁকে কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদের উপনেতা মুহাম্মদ আল-হিনদী বলেছেন, “ইসরায়েল চায় না আগ্রাসন বন্ধ, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং নিরাপদ সহায়তা বিতরণের বিষয়গুলোতে কোনো নিশ্চয়তা থাকুক। তারা সরাসরি বন্দি বিনিময়ের আলোচনায় যেতে চাইছে।”
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু-র ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা জনাতান উরিচ ও তার এক সহকারীকে জার্মান পত্রিকা বিল্ড-এ গোপন সামরিক তথ্য ফাঁসের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, গাজায় ৬ ইসরায়েলি বন্দির মৃত্যুর পর সরকারবিরোধী জনমত প্রভাবিত করতেই তারা তথ্য ফাঁস করেন। নেতানিয়াহু তদন্তকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
সূত্র আল জাজিরা
Leave a Reply