ইসলামে বিবাহ শুধু সামাজিক চুক্তি নয়, এটি একটি পবিত্র বন্ধন—যার ভিত্তিতে নারী ও পুরুষ পরস্পরের প্রতি দায়িত্বশীল হয়। আর এ সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ দেনমোহর, যা শুধু উপহার নয়, বরং স্ত্রীকে দেওয়া এক ইসলামসম্মত অধিকার।
বিয়ের সময় নির্ধারিত দেনমোহর পরিশোধ করা স্বামীর ওপর ফরজ এবং এটি স্ত্রীর নিজস্ব সম্পদ, তার অভিভাবক বা পরিবারের নয়। এই অর্থে কোনো অবস্থাতেই স্ত্রীর ভরণপোষণের খরচ কেটে নেওয়ার সুযোগ নেই।
পবিত্র কোরআনের সুরা নিসা-র ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَآتُوا ٱلنِّسَآءَ صَدُقَٰتِهِنَّ نِحْلَةً…
অর্থ: “তোমরা নারীদের মোহরানার সম্পূর্ণ অর্থ উপহারস্বরূপ দিয়ে দাও…”
এই আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্ট যে, দেনমোহর কোনো ‘মূল্য’ নয়, এটি একটি সম্মানজনক উপহার। এটিকে স্ত্রী নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে পারে। ইচ্ছা হলে স্বামীকে ছেড়ে দিতেও পারে—কিন্তু সেটা অবশ্যই স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া নয়।
স্বামীকে শুধু দেনমোহর পরিশোধ করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। স্ত্রীর আবাসন, খাদ্য ও পোশাকের দায়িত্বও স্বামীর ওপর ফরজ।
সুরা বাকারা-র ২৩৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
“বাবার দায়িত্ব হলো তাদের (স্ত্রীদের) যথাযথভাবে খাদ্য ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করা।”
সুতরাং দেনমোহরের অর্থ দিয়ে ভরণপোষণের খরচ মেটানো ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য। এই দুই খরচ একে অপরের বিকল্প নয়, বরং পৃথকভাবে বাধ্যতামূলক।
স্বামী মৃত্যুবরণ করলে: দেনমোহর পরিশোধের আগেই মৃত্যু হলে তার সম্পত্তি থেকে দেনমোহর আদায় করে স্ত্রীকে দিতে হবে।
স্ত্রী মৃত্যুবরণ করলে: দেনমোহর এখনো বাকি থাকলে তা তার ওয়ারিশদের মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে বণ্টন হবে।
ইসলামী পারিবারিক বিধানে আর্থিক স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও পারস্পরিক দায়িত্ববোধের বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেনমোহরকে খাটো করে দেখা, কিংবা সেটি থেকে সংসারের খরচ কেটে নেওয়া একটি ধর্মীয় ও নৈতিক ভুল, যা শুধুমাত্র স্ত্রীর অধিকার ক্ষুণ্ণ করে না, বরং স্বামীর প্রতি আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার শামিল।
Leave a Reply