ঢাকার অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান—কখনো ছিল সবুজে ঘেরা, নির্মল বাতাস আর হাঁটার পথের জন্য আকর্ষণীয় এক লেকপাড়। কিন্তু আজকের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এক সময়ের সৌন্দর্যের প্রতীক গুলশান লেক এখন যেন রাজধানীর বিষাক্ত জলাশয়, যার চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে পচা পানি, দুর্গন্ধ আর জমে থাকা আবর্জনার স্তূপ।
গুলশান লেকপাড়ের হাল এখন এমন যে, ফুটপাথজুড়ে ছড়িয়ে আছে প্যাকেটজাত খাবার, প্লাস্টিক, পলিথিনসহ নানা ময়লা। লেকের ভেতর নেমে যাচ্ছে এসব বর্জ্য। বিকেলের হাঁটা, মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়া কিংবা শহরের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলার জায়গা হিসেবে পরিচিত এই জায়গা এখন স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নাগরিক অস্বস্তির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন—“এখন লেকপাড়ে হাঁটার সময় নাক চেপে ধরতে হয়। দুর্ভোগ পোহাতে হয় প্রতিনিয়ত। অথচ গ্যাস, পানি, হোল্ডিং ট্যাক্স—সব কিছুতেই গুলশান এলাকার বাসিন্দারা ঢাকার অন্যতম সর্বোচ্চ করদাতা।”
পচা পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশার ঝাঁক। পুরো এলাকা যেন ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হওয়ার পথে। নেই নিয়মিত ময়লা অপসারণের উদ্যোগ, ড্রেনেজ ব্যবস্থাও দুর্বল।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে খাল পরিষ্কারের জন্য ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও গুলশান লেকের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বাজেট রাখা হয়নি। যা প্রশ্নের মুখে ফেলছে নগর পরিকল্পনা ও পরিবেশগত অগ্রাধিকার নির্ধারণের দৃষ্টিভঙ্গিকে।
সিটি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, “প্রতিদিন সকাল ৮টার মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকা পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু দুপুর ১২টার মধ্যেই আবার ময়লা জমে যায়। শুধু পরিষ্কার করলেই চলবে না, নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে।”
রাজউক, ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয় না থাকাই গুলশান লেক সংকটের বড় কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
গুলশান সোসাইটির সহ-সভাপতি ইসরাত জাহান বলেন, “বিভিন্ন ভবনের সুয়ারেজ সংযোগ সরাসরি লেকে গিয়ে মিশছে, যা মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে।”
পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ ড. মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, “শুধু বরাদ্দ নয়, দরকার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবেশগত সচেতনতা এবং কঠোর আইন প্রয়োগ। লেক রক্ষায় আন্তঃপ্রতিষ্ঠানিক সমন্বয় অপরিহার্য।”
গুলশান লেক এখন শুধুই একটি ভৌগোলিক জলাধার নয়, এটি হয়ে উঠেছে নগর ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার প্রতীক। প্রশ্ন উঠেছে—এই শহর কি এখনও বসবাসের উপযোগী আছে, নাকি নাগরিকরা কেবল অভ্যস্ত হয়ে গেছে অনিয়ম আর দূষণের সঙ্গে পথ চলতে?
Leave a Reply