সকালে চুলায় আগুন জ্বলে না, রাতে ঘুম ভেঙে রান্না করতে হয়—এ যেন রাজধানীবাসীর নিত্যদিনের বাস্তবতা। গ্যাস সংকটে নাকাল ঘরে-বাইরে সবাই, অথচ প্রতি মাসে গ্যাস বিলের রশিদ ঠিকই পৌঁছে যাচ্ছে গ্রাহকের দরজায়।
বিশেষ করে চলমান বৈরী আবহাওয়ায় মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায়, সংকট আরও প্রকট হয়েছে। বাড়ি, ফিলিং স্টেশন, এমনকি শিল্পকারখানায়ও নেই পর্যাপ্ত গ্যাসের চাপ।
খিলগাঁও, মিরপুর-১২, পল্লবী, আগারগাঁও, রামপুরা—এই সব অঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, দিনে গ্যাস আসে না বললেই চলে। মাঝরাতে এসে অল্প সময়ের জন্য চাপ আসে। ফলে রান্না করতে বাধ্য হয়ে অনেকেই ফিরেছেন মাটির চুলায়—যেখানে কাঠ কিনতেই খরচ হয় কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকা।
গাড়ি চালকদের অভিযোগ, “১৫০ প্রেশারে গ্যাস নিয়ে কিছুক্ষণ চললেও, বারবার লাইনে দাঁড়াতে হয়।” অনেক স্টেশনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে চালকদের।
শুধু ঘর নয়, শিল্পকারখানাও চরম চাপের মুখে। গ্যাসের ঘাটতির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বহু প্রতিষ্ঠানে। রপ্তানিমুখী শিল্প খাতও পড়ছে সংকটে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল আলম বলেন, “মানুষ উচ্চমূল্যে গ্যাস কিনছে, অথচ পাচ্ছে না। সরকারি সংস্থাগুলোর অব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘদিনের অবহেলার কারণে এ অবস্থা।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখনই এলএনজির বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে, না হলে ভবিষ্যতে সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।
বর্তমানে দেশে মোট গ্যাস চাহিদার ৩০ শতাংশের বেশি পূরণ হচ্ছে আমদানিকৃত এলএনজি থেকে, যা মূলত আসে মহেশখালীর ভাসমান টার্মিনাল থেকে। সামান্য আবহাওয়ার বিরূপতায়ও সেখানে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় সমগ্র জাতীয় সরবরাহ চেইনেই দেখা দেয় টানাপোড়েন।
Leave a Reply