রাশিয়ার একটি কারাগারে আজারবাইজানের দুই নাগরিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাশিয়া-আজারবাইজান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে বাকু দাবি করেছে—রুশ নিরাপত্তা বাহিনীর ‘নির্যাতনে’ তাদের নাগরিকদের মৃত্যু হয়েছে, অন্যদিকে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আজারবাইজানে রুশ গণমাধ্যম স্পুটনিকের সাতজন সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেন চিফ এডিটর ইয়েভগেনি বিলভও।
ঘটনার সূত্রপাত রাশিয়ার ইকাতেরিনবার্গ শহরে, যেখানে সিরিয়াল কিলিংসহ পুরনো কিছু মামলার তদন্তে নতুন করে তল্লাশি অভিযান শুরু করে রুশ নিরাপত্তা বাহিনী। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার আটক করা হয় নয়জন আজারি—যাদের মধ্যে ছিলেন দুই ভাই হোসেন (৬০) ও জিয়াদিন (৫৫)।
পরবর্তীতে পুলিশি হেফাজতেই মৃত্যু হয় দুই ভাইয়ের। সোমবার তাদের মরদেহ আজারবাইজানে পৌঁছে গেলে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে, জিয়াদিনের মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। তবে হোসেনের মৃত্যুর কারণ প্রকাশ করা হয়নি। এর বিপরীতে আজারবাইজানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফরেনসিক বিভাগ প্রকাশ করেছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, যেখানে মাথার ভেতর টিস্যু ক্ষত, বুক ও পাঁজরে আঘাতের চিহ্ন এবং একাধিক ফ্র্যাকচারের উল্লেখ রয়েছে।
নিজ দেশের নাগরিকদের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ আজারবাইজান মঙ্গলবার অভিযান চালায় রাজধানী বাকুতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম স্পুটনিক আজারবাইজান–এর কার্যালয়ে। আটকে রাখা হয় প্রতিষ্ঠানটির সাতজন কর্মীকে। অভিযোগ: ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, অবৈধ ব্যবসা এবং অর্থপাচার।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আজারবাইজানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে জানায়—“মিডিয়াকর্মীদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয় এবং রাশিয়া-আজারবাইজানের সম্পর্কের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
রাশিয়া-আজারবাইজান সম্পর্কের উত্তেজনার পেছনে আগেও বেশ কিছু ঘটনা ভূমিকা রেখেছে। গত ডিসেম্বর, চেচনিয়ায় হামলার শিকার হয়ে একটি আজারি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়, যাতে মৃত্যু হয় ৩৮ জনের। সে সময় আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ প্রকাশ্যে এর জন্য মস্কোকে দায়ী করেন। সেই থেকেই দুদেশের সম্পর্কে অবিশ্বাসের ছায়া স্পষ্ট হতে থাকে।
রাশিয়া দাবি করছে, তাদের হেফাজতে আটক আজারিদের সবারই রুশ পাসপোর্ট ছিল। অন্যদিকে আজারবাইজান রুশ নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিগতভাবে টার্গেট করে ধরপাকড় ও বেআইনি হত্যার অভিযোগ এনেছে। দুই পক্ষই এখন কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং মিডিয়া ও নিরাপত্তা বাহিনীকে টার্গেটে পরিণত করছে।
Leave a Reply