আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এক নজিরবিহীন রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত পলাতক শেখ হাসিনাকে আদালত অবমাননার দায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই মামলায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দুই মাসের সাজা প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই রায় ঘোষণা করে। দীর্ঘ রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে দেশত্যাগ করা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এটি প্রথম দণ্ডপ্রাপ্তি—যা দেশের আইনি ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর, গাইবান্ধার একজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ফোনালাপে শেখ হাসিনা ২২৭ জনকে হত্যার হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠে। এই অডিও ক্লিপ ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে এবং রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করে।
পলাতক থাকা অবস্থায় সাধারণত আসামিদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করা না হলেও, ন্যায়বিচারের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় খরচে শেখ হাসিনার জন্য একজন আইনজীবী নিয়োগ দেন আদালত—যা বিচারব্যবস্থার ভারসাম্য রক্ষার দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।
বিচারকরা ট্রাইব্যুনালে শুনানিকালে ফাঁস হওয়া অডিও পর্যালোচনা করেন এবং “২২৭ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়েছি” — শেখ হাসিনার এই বক্তব্যকে আদালতের মর্যাদার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, “এই ধরনের বক্তব্য বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।”
ফলে আদালত সর্বসম্মতিক্রমে তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন। সহ-অভিযুক্ত শাকিল আকন্দ বুলবুলকেও বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টার দায়ে দুই মাসের দণ্ড দেওয়া হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রায় শুধু একটি বিচ্ছিন্ন মামলার ফয়সালা নয়; বরং এটি দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থার অগ্রগতি এবং ন্যায়ের প্রতি আপসহীন অবস্থানের প্রতীক। একইসঙ্গে, এটি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক বক্তব্য বা কার্যক্রমের সীমারেখা নিয়েও একটি বার্তা দিয়ে গেল।
Leave a Reply