বাংলাদেশ এখন সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজ মালিক দেশের (Ship Owning Country) তালিকায়—জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা আঙ্কটাড (UNCTAD) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে ৩৫তম স্থানে উঠে এসেছে দেশের নাম। স্বাধীনতার পর মাত্র দুটি জাহাজ নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই দেশ এখন আন্তর্জাতিক সমুদ্রবাণিজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।
এবারই প্রথম বাংলাদেশের নাম শীর্ষ ৩৫ জাহাজ মালিক দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যেখানে বর্তমানে বাংলাদেশের মালিকানাধীন রয়েছে ১০২টি কার্গো মাদার ভ্যাসেল ও ১৭০টি মাছ ধরার ফিশিং ভ্যাসেল।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমুদ্রবাণিজ্যে বাংলাদেশি জাহাজের অবদান এখন আর ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। আঙ্কটাডের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশি জাহাজ বছরে প্রায় ৫২.৫৭ লাখ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করে এবং এতে দেশের শেয়ার ০.২ শতাংশ হলেও এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব যথেষ্ট।
ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ, নৌবাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার জানান,
“এই প্রথম বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে শিপ ওনিং কান্ট্রি হিসেবে স্বীকৃতি পেল। এটা আমাদের জন্য বড় সম্মান ও সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।”
বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজগুলো মূলত চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয়। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর এই উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী করতে ‘ফ্ল্যাগ ভ্যাসেল নীতিমালা’ বাস্তবায়ন করেছে, যেখানে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বার্থিং সুবিধা দেওয়া হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন,
“ট্রেড রুট বিস্তৃত হবে, বাড়বে কার্গো প্রবাহ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংযোগ আরও শক্তিশালী হবে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অল্প কিছু নীতিগত ও প্রশাসনিক জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে বাংলাদেশ সহজেই তালিকায় ২০তম স্থান দখল করতে পারবে।
আঙ্কটাড রিপোর্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকও উঠে এসেছে—বর্তমানে ৬টি বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ বিদেশি পতাকা নিয়ে চলাচল করছে, যা শিগগিরই জাতীয় পতাকার আওতায় আনার পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ এখন শুধু তৈরি পোশাক রপ্তানিতেই নয়, জাহাজ শিল্পেও একটি সম্ভাবনাময় উদীয়মান শক্তি। শিপিং খাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব, বন্দরের আধুনিকীকরণ এবং জাহাজ নিবন্ধনের সহজিকরণে জোর দিলে দেশ এই খাতে আঞ্চলিক নেতৃত্বের জায়গায় পৌঁছাতে পারে।
Leave a Reply