মহররমের ১০ তারিখ, অর্থাৎ আশুরা, ইসলামের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ দিন। এ দিনটির মাহাত্ম্য শুধুমাত্র কারবালার স্মৃতির সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি নবীজির সুন্নাহ ও পূর্ববর্তী নবীদের আমলের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কিত। আর এ কারণেই ইসলামি শরিয়তে আশুরার রোজা পালনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে সহিহ মুসলিমে একটি প্রসিদ্ধ হাদিস রয়েছে। সাহাবি আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“আশুরার দিনে রোজা রাখলে আমি আশা করি, আল্লাহ তা’আলা বিগত এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।”
(সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
এ হাদিস থেকেই বোঝা যায়, ১০ মহররমের রোজা শুধুমাত্র নফল ইবাদত নয়; বরং তা অতীত জীবনের পাপমোচনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিরল সুযোগ।
আশুরার রোজার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, শুধুমাত্র ১০ তারিখ নয়; বরং ৯ ও ১০ কিংবা ১০ ও ১১ মুহাররমে রোজা রাখা অধিক ফজিলতপূর্ণ এবং আহলে কিতাব থেকে পার্থক্য বজায় রাখার সুন্নাহর অংশ।
সাহাবি ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন:
“তোমরা ৯ ও ১০ তারিখ রোজা রাখ এবং ইহুদিদের বিরোধিতা কর।”
(তিরমিজি: ৭৫৫)
এমনকি হাদিসে এসেছে:
“তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং তার এক দিন আগে কিংবা পরে আরও একটি রোজা রাখ।”
(ইবনে খুযাইমা: ২০৯৫, আহমাদ: ২১৫৪)
এই রেওয়ায়েতের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়, আশুরার রোজাকে এককভাবে না রেখে সঙ্গে একটি অতিরিক্ত দিন যুক্ত করে দুই দিন রোজা রাখা সুন্নাতের কাছাকাছি।
আশুরা ইসলামের ইতিহাসে এমন একটি দিন, যেদিন হজরত মূসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা ফেরাউন থেকে মুক্তি পান। নবী করিম (সা.) মদিনায় হিজরতের পর দেখতে পান, ইহুদিরাও এই দিন রোজা রাখে। তিনি বলেন:
“আমরা মূসার প্রতি তাদের চেয়ে অধিক হকদার।”
এরপর তিনি নিজে রোজা রাখেন এবং সাহাবাদেরও উৎসাহ দেন।
এই দিন কেবল রোজা রাখাই নয়, বরং অতিরিক্ত ইবাদত, দান-সদকা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমেও পালনীয়।
Leave a Reply