মৃত্যু ও ক্ষুধার রাজ্যে পরিণত গাজা, মানবিক বিপর্যয় আরও তীব্র হচ্ছে
ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনে ইতোমধ্যে গাজার শিশুরা ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছে। অন্তত ৬৬ শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে, জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, গাজায় শিশুদের অপুষ্টির হার ‘আশঙ্কাজনকভাবে’ বাড়ছে।
গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েলি অবরোধে দুধ, পুষ্টিকর খাদ্য ও জরুরি সহায়তা ঢুকতে না পারায় শিশুরা মৃত্যুর মুখে পড়ছে। তারা অভিযোগ করেছে,
“এই অবরোধ পরিকল্পিত যুদ্ধাপরাধ। ইসরায়েল যেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাধারণ জনগণকে অনাহারে রেখে ধ্বংস করতে চায়।”
সংস্থাটি আরও বলেছে,
“এই অব্যাহত শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমাজের নিরবতা লজ্জাজনক।” তারা ইসরায়েলসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিকে এই মানবিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করেছে এবং জাতিসংঘকে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে গাজার সীমান্তগুলো খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক এডুয়ার্ড বেইগবেদার জানিয়েছেন:
কেবল মে মাসেই ৫,১১৯ শিশু অপুষ্টিতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়েছে।
বছরের শুরু থেকে মে মাস পর্যন্ত মাত্র ১৫০ দিনে ১৬,৭৩৬ শিশু, অর্থাৎ দৈনিক গড়ে ১১২ শিশু অপুষ্টির শিকার।
তিনি বলেন,
“এই মৃত্যুগুলো প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু খাবার, পানি ও চিকিৎসা সামগ্রী বাধার কারণে পৌঁছাতে পারছে না। এসব মৃত্যু মানবসৃষ্ট সিদ্ধান্তের ফলাফল।”
ইসরায়েলি বাহিনী শনিবার গাজা শহরের টুফাহ পাড়ায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ২০ জনকে হত্যা করে, যাদের মধ্যে ৯ জনই শিশু।
এক স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদ আল-নাখালা বলেন,
“একটি বেসরকারি নম্বর থেকে ফোনে বলা হয়, পুরো ব্লক খালি করতে। এরপরই কয়েক মিনিটে সব ধ্বংস হয়ে যায়। আমরা এখনও জানি না কেন আমাদের বাড়ি লক্ষ্যবস্তু করা হলো।”
GHF (Gaza Humanitarian Foundation) নামে এক মার্কিন-সমর্থিত সহায়তা কেন্দ্র বর্তমানে গাজার একমাত্র খাদ্য উৎস। অথচ এখানেই ৫৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানান,
“অনেকে GHF কেন্দ্র এড়িয়ে চলছেন, কারণ সেখানে গুলি চালিয়ে সহায়তা নিতে আসা মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে। তবে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই, না গেলে শিশুরা না খেয়েই ঘুমাবে।”
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস GHF কার্যক্রমকে “বিপজ্জনক ও প্রাণঘাতী” বলে অভিহিত করেছেন।
ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ জানিয়েছে, সেনাদের GHF সাইটে অনাহারে ভোগা মানুষের ওপর গুলি চালানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে।
যদিও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এটি অস্বীকার করেছে।
ক্রিস ডয়েল, কাউন্সিল ফর আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এর পরিচালক বলেছেন:
“GHF’র কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানবিক নীতির পরিপন্থী—একটি কলঙ্ক।
এটি বন্ধ না হলে আরও সহস্র প্রাণ ঝরে যাবে।”
Leave a Reply