প্রতিটি নববর্ষ মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় সময়ের অমোঘ স্রোতধারা ও জীবনের অনিত্যতাকে। হিজরি নববর্ষ—ইসলামি ক্যালেন্ডারের সূচনা মুহূর্ত—এর ব্যতিক্রম নয়। বরং এটি শুধুমাত্র নতুন একটি বছরের সূচনাই নয়, বরং মুমিনের আত্মিক জাগরণ, আত্মসমালোচনা ও নতুন করে দ্বীনি অঙ্গীকারের সুযোগ। পবিত্র মহররম মাস দিয়ে যাত্রা শুরু হয় হিজরি বর্ষের। এই মাসকে ইসলামে মর্যাদা ও তাৎপর্যের মাস বলা হয়, কারণ এ মাস শুধু সময়ের হিসাবের সূচক নয়—বরং এটি আত্মশুদ্ধির এক বিশুদ্ধ আয়না।
হিজরি নববর্ষ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত একদিন হিসাবের আওতায় আসবে। মহান আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেকেই যেন দেখে নেয়, সে আগামী দিনের জন্য কী প্রস্তুত করেছে।” (সূরা হাশর: ১৮)। এই আয়াত কেবল ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নয়, বরং নিজের আমল, চরিত্র ও নিয়তের প্রতি প্রতিনিয়ত নজর রাখার শিক্ষা দেয়।
ইসলামি বর্ষপঞ্জির সূচনা হয় দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর সময়কালে। সাহাবায়ে কেরামের পরামর্শে নির্ধারিত হয়, হিজরি বর্ষের সূচনা হবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হিজরতের বছর থেকে। কারণ এই হিজরত ছিল কেবল স্থান পরিবর্তন নয়—বরং এটি ছিল ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপনের সূচনা, যে মুহূর্তে মক্কার নিপীড়নের অধ্যায় শেষ হয়ে মদিনায় ইসলামের পূর্ণ বিকাশের পথ উন্মুক্ত হয়েছিল।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে নিজের হিসাব-নিকাশ করে এবং মৃত্যুর পরে জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে।” (তিরমিজি: ২৪৫৯)। এই হাদিসের আলোকে হিজরি নববর্ষে আমাদের উচিত একটি স্পষ্ট আত্মমূল্যায়ন করা—আমাদের সময়, আমল ও গুনাহগুলোর হিসাব নেওয়া এবং আগামী দিনের জন্য পরিকল্পনা করা।
হিজরি বছরের করণীয়:
তাওবা ও ইস্তিগফার: আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। (সহিহ মুসলিম: ২৭০২)
নিয়তের পরিশুদ্ধতা: কাজের প্রেরণা ও অভিপ্রায় শুদ্ধ না হলে কোনো কাজই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। (সহিহ বুখারি: ১)
ইবাদতে মনোনিবেশ: দুনিয়াবি ব্যস্ততা থেকে বেরিয়ে নিয়মিত ইবাদতের সময় নির্ধারণ করা।
দান-সদকা বৃদ্ধি: আন্তরিকভাবে করা ছোট দান আল্লাহর কাছে অধিক মূল্যবান। (মুসনাদ আহমদ: ২২০৮৮)
ইসলামি রুটিন তৈরি: প্রতিদিনের সময় থেকে কিছু অংশ নির্দিষ্ট করুন কুরআন তিলাওয়াত, ইলম অর্জন ও নফল ইবাদতের জন্য।
এই নববর্ষ যেন শুধুই উৎসবের উপলক্ষ না হয়, বরং হয়ে উঠুক আত্মশুদ্ধি, আত্মসমর্পণ ও তাকওয়ার এক নতুন যাত্রা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “সৎকর্মে দ্রুত অগ্রসর হও।” (সহিহ মুসলিম: ১১৮)। তাই এ বছর হোক পাপমুক্ত জীবনের নতুন প্রতিশ্রুতি, সৎকর্মে নিজেকে উত্সর্গ করার সময়।
Leave a Reply