চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবার আর কোনো বিদেশি কোম্পানির হাতে নয়—প্রাথমিকভাবে আগামী ছয় মাস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে করে আলোচিত এ টার্মিনাল ব্যবস্থাপনার ভবিষ্যৎ ঘিরে সৃষ্টি হওয়া রাজনৈতিক উত্তেজনারও একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান মিলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে নীতিগত সম্মতি পাওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ টার্মিনাল পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। প্রতি মাসে পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি টাকা, অর্থাৎ ৬ মাসে মোট ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে পরিচালনার জন্য সরকারের কাছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে বলা হয়েছে—আইন অনুযায়ী ৫ কোটির বেশি ব্যয়ে সরকার অনুমোদিত টেন্ডার প্রক্রিয়া আবশ্যক। তাই ব্যয়ের বিষয়টি সংসদীয় অনুমোদনাধীন।
বর্তমান অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক-এর চুক্তি ৬ জুলাই শেষ হতে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে এনসিটির দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার ইঙ্গিত মেলায় ব্যবসায়ী মহলসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এই পরিস্থিতিতে সরকার “স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা”-এর পথে এগিয়ে যাওয়ায় অনেকেই এটিকে “সঠিক সিদ্ধান্ত” হিসেবে দেখছেন।
রিলায়েন্স শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস-এর নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদ আলম বলেন,
“বিদেশি অপারেটর ছাড়া নিজেরাই যদি চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষভাবে এনসিটির মতো একটি অত্যাধুনিক সিস্টেম পরিচালনা করতে পারে, তবে সেটাই দেশের সক্ষমতার বড় উদাহরণ হবে।”
চট্টগ্রাম বন্দর ও এনসিটির অবদান
চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিবছর যে ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়, তার ৪৪ শতাংশই সম্পন্ন হয় এনসিটিতে
১৮টি গ্যান্ট্রি ক্রেনের মধ্যে ১৪টি রয়েছে এনসিটিতে, যেখানে একযোগে ৪টি জাহাজ ভেড়ানো যায়
বাকি ৪টি ক্রেন রয়েছে সিসিটিতে, যা ৩৭ শতাংশ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শফিকুল আলম জুয়েল বলেন,
“সেন্ট্রাল কনটেইনার মুভমেন্ট মনিটরিং সিস্টেম (CCMMS) সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেই এনসিটি পরিচালনা করতে পারবে।”
২০০৭ সালে প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলেও শুরুতে দীর্ঘ ৩ বছর অপারেটর সংকটে ভুগেছিল এনসিটি।
পরবর্তীতে সাইফ পাওয়ারটেক এর দায়িত্ব নেয়। তবে এর মাঝে বন্দরের পক্ষ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গ্যান্ট্রি ক্রেন স্থাপন করা হয়—যা বর্তমানে দেশের আধুনিক নৌবাণিজ্য কাঠামোর অন্যতম শক্তি।
সাবেক বন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর আলম বলেন—
“যত দ্রুত খালাস, ততটাই ব্যবসার গতি। কোনো পরীক্ষামূলক সিদ্ধান্তের কারণে যেন খালাসে ধীরগতি না আসে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।”
Leave a Reply