যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে আনুষ্ঠানিক লাঞ্চে আমন্ত্রণ জানিয়ে চমক তৈরি করেছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কারণ এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমনভাবে কোনো পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানাননি—যিনি রাষ্ট্রপ্রধান নন। চলতি বছরের মার্চে কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প যখন আফগানিস্তানের অ্যাবি গেট বিস্ফোরণের ঘটনায় পাকিস্তানকে “অভিযুক্তকে ধরতে সহায়তা করায়” ধন্যবাদ জানান, তখন থেকেই সম্পর্কের এই পুনঃগঠনের ইঙ্গিত মিলেছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাচ্ছে, যার পেছনে কৌশলগত প্রয়োজন এবং ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে জড়িত। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার মে মাসের সীমান্ত উত্তেজনা ঠেকাতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা এই নতুন সমীকরণকে ত্বরান্বিত করেছে। Oval Office-এ মিডিয়ার সামনে ট্রাম্প বলেন, “আমি যুদ্ধ থামিয়েছি। পাকিস্তান ও ভারতের দুই শীর্ষ নেতাই অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। আমরা এখন ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে ট্রেড ডিল নিয়েও কাজ করছি।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই আমন্ত্রণ শুধু কূটনৈতিক প্রোটোকলের ব্যত্যয় নয়, বরং প্রোটোকল পুনর্লিখনের ইঙ্গিত, যেখানে পাকিস্তান হোয়াইট হাউসের ‘ইনার সার্কেল’-এ অবস্থান নিচ্ছে। তবে এই ঘনিষ্ঠতা কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এবং দক্ষিণ এশিয়ায় চীন-মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। পাকিস্তানের ভূ-কৌশলগত অবস্থান, পরমাণু শক্তি ও রেয়ার আর্থ মিনারেল সম্পদ এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি দেশটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রকে কর-মুক্ত বাণিজ্য সুবিধা, খনিজ সম্পদ ও ক্রিপ্টো বিনিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে বলেও শোনা যাচ্ছে।
তবে সমালোচকদের মতে, এই সম্পর্ক যদি শুধুই সামরিক-নির্ভর থাকে, তাহলে তা পাকিস্তানের গণতন্ত্রের জন্য এক ধাক্কা। সিটির ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কের অধ্যাপক রাজা আহমদ রুমি মন্তব্য করেন, “এই বৈঠক প্রমাণ করে, পাকিস্তানে এখনো ‘খাকি’-ই রাজত্ব করছে, ব্যালট নয়।”
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টকম কমান্ডার জেনারেল মাইকেল ই. কুরিলা বলেছেন, পাকিস্তান বর্তমানে সক্রিয়ভাবে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে এবং অ্যাবি গেট হামলাকারীর গ্রেফতার সম্ভব হয়েছে সরাসরি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান মুনিরের সহযোগিতায়। সব মিলিয়ে ট্রাম্প-মুনির বৈঠক আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করলেও, এটি কতটা স্থায়ী ও গঠনমূলক হবে তা এখনো সময়ের উপর নির্ভর করছে। কারণ, অনেক বিশ্লেষকের মতে, ট্রাম্পের প্রশাসন ‘চলমান এবং অস্থির’—যা যেকোনো মুহূর্তে দিক পরিবর্তন করতে পারে।
Leave a Reply