বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুদিনের জমাটবাঁধা অচলাবস্থার মধ্যে খানিকটা শীতল বাতাস। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠক ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে আশাবাদের নতুন ধারা। বৈঠকে আসন্ন রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে। তারা মনে করছেন, রমজানের আগে নির্বাচন হলে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা হ্রাস পাবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ সুগম হবে।
তবে বিষয়টিকে ভিন্ন চোখে দেখছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তাদের মতে, শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তা অন্যান্য দলের প্রতি অবমূল্যায়নের সামিল।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “জুলাই আন্দোলনের অংশীদার ও শহীদ পরিবারদের মতামতকে উপেক্ষা করে নির্বাচন তারিখ পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ একতরফা।” তবে তিনি স্বীকার করেন, সরকার দুইটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত দিয়েছে—নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়া এবং বিচার ও সংস্কারে অগ্রগতি হলে তারা সময় পুনর্বিবেচনা করতে পারে, যা একটি ইতিবাচক দিক।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “যারা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসবে, তারাই দেশ পরিচালনার সক্ষমতা রাখে। অতএব, দ্রুত নির্বাচনই সঙ্কট নিরসনের চাবিকাঠি।”
আরেক সিনিয়র নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা হওয়াই যুক্তিযুক্ত, কারণ তফসিল ঘোষণার পর ৪৫–৫০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ সম্ভব হয়।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “এই সরকারের মৌলিক দায়িত্ব একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। সরকারের নাম যাই হোক, কাজটাই গুরুত্বপূর্ণ।”
বিএনপির পক্ষ থেকে যারা নির্বাচনের সময় পুনর্বিবেচনা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন, তাদের সমালোচনা করা হয় ‘বাস্তবতা বিবর্জিত অবস্থান’ বলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, “বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি। তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া রাজনৈতিক সমাধান অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।” তিনি আরও বলেন, “ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের আলোচনায় অগ্রগতি হলেও এটি শেষ কথা নয়। সামনে জুলাই প্রোক্লেমেশন ঘোষণার পর সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে, যার সমাধান রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া সম্ভব নয়।”
Leave a Reply