প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) যখন মিউনিখে চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে নিজেদের নাম লেখায়, তখন সেই ঐতিহাসিক রাত প্যারিসে রূপ নেয় এক ভয়ংকর স্মৃতিতে। বিজয় উদযাপন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত দুই সমর্থক, আহত হয়েছেন ২০০-র বেশি। সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও আগুনে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা শহর।
মেসি-নেইমার যুগের ব্যর্থতার গ্লানি মুছে দিয়ে এনরিকের নেতৃত্বে তরুণদের এই সাফল্যে প্যারিসে নামে উৎসবের জোয়ার। শহরের কেন্দ্রস্থলে চ্যাম্পস এলিসেসে জমে যায় লাখো সমর্থকের ঢল। শুরু হয় আতশবাজি, বাদ্যযন্ত্র ও নাচ-গানের ছন্দে উদযাপন।
কিন্তু হঠাৎ করেই আনন্দের সেই মিছিল রূপ নেয় নৈরাজ্যে। ভাঙচুর করা হয় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। পুলিশের সঙ্গে সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ছড়ায় আতঙ্ক। টিয়ার গ্যাস, জলকামান ব্যবহার করেও নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খায় পুলিশ।
নিহত দুই, আহত শতাধিক:
চ্যাম্পস এলিসেস থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মারা যান এক স্কুটারচালক। অপরদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আরেক শহরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান ১৭ বছরের এক কিশোর সমর্থক। পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোরকে উৎসব চলাকালীন ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় আততায়ী।
গ্রেফতার ৫০০+, পুড়েছে ২০০+ যানবাহন:
দেশজুড়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে পুড়ে গেছে ২০০টিরও বেশি গাড়ি ও কয়েকটি সরকারি স্থাপনা। প্যারিস ছাড়াও মার্সেই, লিয়ঁ, তুলুজসহ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫০০ জনেরও বেশিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সদস্যসহ বহুজন গুরুতর আহত:
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধু জনসাধারণ নয়, আহত হয়েছেন পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যও। এরমধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আতশবাজির কারণেও বেশ কয়েকটি স্থানে আগুন লেগেছে, যার মধ্যে কিছু ছিল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
ফ্রান্স সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার পেছনে কারা ছিল এবং কীভাবে উদযাপন রূপ নিল সহিংসতায়—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ফ্রান্সজুড়ে চলছে আলোচনা—কীভাবে একটি খেলার সাফল্য এমন ভয়াবহ সহিংসতার জন্ম দিতে পারে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। কেউ বলছেন, “এটা উদযাপন নয়, বর্বরতা।”
বিশ্ব ফুটবলে পিএসজির প্রথম ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের ইতিহাস যেমন লেখা হলো, তেমনি ফ্রান্সের নাগরিক জীবনে যোগ হলো এক দগদগে ক্ষত।
Leave a Reply