২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত কথিত গণহত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে অভিযুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। রোববার (১ জুন) বেলা পৌনে ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ইউনিট এই অভিযোগ জমা দেয়।
এই অভিযোগপত্রে শেখ হাসিনাকে গণহত্যার ‘মূল নির্দেশদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রসিকিউশন বলছে, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে ঘটে যাওয়া রক্তাক্ত অভিযানে প্রায় দেড় হাজার নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ হারান, যাদের অধিকাংশই ছিলেন ছাত্র ও নাগরিক সমাজের শান্তিপূর্ণ কর্মী।
৩১ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন,
“জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞের বিচার ডিসেম্বরে দৃশ্যমান হবে। বিচার এমনভাবে হবে যেন আন্তর্জাতিক মান নিয়েও কেউ প্রশ্ন না তোলে।”
তিনি আরও জানান, বিচারপ্রক্রিয়া এখন পুরোদমে চলছে এবং ইতোমধ্যে ১০-১৫টি ‘গুরুত্বপূর্ণ গুম’ মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। জুনের মধ্যেই এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা পড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
চিফ প্রসিকিউটরের মতে,
“অপরাধের কাঠামো ও অপরাধীদের পরিচিতি ট্রাইব্যুনাল স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছে। তবে গুম সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার কার্যক্রম এখনও কিছুটা বাধার মুখে রয়েছে।”
১২ মে তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে তাকে জুলাই গণহত্যার পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এর আগেই, ১৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের বেঞ্চ — যার নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার — শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করতে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন।
২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর আরেক আদেশে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুই মামলায় তদন্ত শেষ করতে দুই মাস সময় বেঁধে দিয়েছিল।
প্রসিকিউশনের অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। অভিযোগ রয়েছে, সেই সময়ে সরকারি নির্দেশে নিরাপত্তা বাহিনী শান্তিপূর্ণ মিছিল ও সমাবেশে গুলি চালায়, নির্বিচারে মানুষ গ্রেপ্তার ও গুম করে। এই প্রেক্ষাপটেই ট্রাইব্যুনালে ওঠে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গুমের মতো অভিযোগ।
Leave a Reply