২০২৪ সালের মে মাসে দেশের স্বর্ণবাজারে নজিরবিহীন অস্থিরতা দেখা গেছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এক মাসে ১০ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে—যার মধ্যে ৫ বার বেড়েছে, আর বাকি ৫ বার কমেছে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত ৩৬ বার স্বর্ণের দাম ওঠানামা করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ বেশি।
স্বর্ণের এই ধারাবাহিক উত্থান-পতনের পেছনে রয়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা, ডলারের দামের ওঠানামা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেন সংকট—সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এসব পরিস্থিতিতে স্বর্ণকে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগ বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও।
বাজুস বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে ওঠানামা হলে স্বাভাবিকভাবেই তার প্রভাব দেশের বাজারে পড়ে। মে মাসের শুরুতেই ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম কমে দাঁড়ায় ১,৬৮,৯৭৬ টাকা, পরে মাত্র একদিনের ব্যবধানে বেড়ে হয় ১,৭৪,৯৪৮ টাকা। এরপর একাধিক দফায় দাম কমে গিয়ে পৌঁছায় ১,৬৭,৬২৩ টাকায়, আবারও বৃদ্ধি পেয়ে মে মাস শেষে দাঁড়ায় ১,৬৯,৯২১ টাকায়।
বিশ্ববাজারের আভাস অনুযায়ী, স্বর্ণের দামে আরও বড় উত্থান আসতে পারে। জেপি মরগান জানিয়েছে, ২০২৬ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের মধ্যেই প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৪,০০০ ডলার ছুঁয়ে ফেলতে পারে। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ গড় দাম হতে পারে ৩,৬৭৫ ডলার, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করছে।
এই পটভূমিতে বলা যায়, স্বর্ণ এখন শুধু অলঙ্কারের জগতেই নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতির সূচক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অস্থির বিশ্বপরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতির চাপ এবং সুদের হারের দোলাচলে যেখানে অন্য বিনিয়োগ মাধ্যমগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, সেখানে স্বর্ণ আবারও নিজের অবস্থান পোক্ত করে নিচ্ছে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে।
Leave a Reply