সাম্প্রতিক নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা দিয়েছে মারাত্মক দুর্যোগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুয়াকাটার পর্যটনকেন্দ্রসহ ভোলার বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়ন।
উদ্বোধনের আগেই নির্মাণাধীন কুয়াকাটা মেরিন ড্রাইভের একাধিক অংশ ভেঙে গেছে জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ ও প্রবল জোয়ারের কারণে সড়কের তিন থেকে চারটি অংশ ইতোমধ্যে ধসে গেছে। ধ্বংস হয়েছে গাইডওয়াল ও ওয়াকওয়ের বড় অংশ। কুয়াকাটা পৌরসভা প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৪ সালে এ প্রকল্প হাতে নেয়, যার দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় দুই কিলোমিটার।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, সড়ক নির্মাণে মান বজায় রাখা হয়নি। তাদের মতে, যদি আরও উঁচু ও সুরক্ষিতভাবে বাঁধ নির্মাণ হতো, তাহলে এ ধরণের বিপর্যয় এড়ানো যেত।
“জোয়ারে পানি যদি এভাবেই ঢুকে পড়ে, তবে বর্ষার মৌসুমে অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে,” বলছেন এক স্থানীয় বাসিন্দা।
কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক আশ্বাস দিয়েছেন, পুরো প্রকল্প খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ক্ষতিপূরণ আদায় করে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ভোলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল ঢালচরে নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হয়ে গেছে অসংখ্য গবাদিপশু, ফসলি জমি ও বসতঘর। ঝড়ো হাওয়ায় ঢেউয়ের আঘাতে এক রাতেই নিঃস্ব হয়েছে শত শত পরিবার।
“ঘর, দোকান, এমনকি খাবার রাখার জায়গাটুকুও নেই আর। বাচ্চাদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছি,” — বলেন ঢালচরের এক ক্ষতিগ্রস্ত নারী।
ভোলা জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সাত উপজেলায় প্রায় ৫,৩৬৫টি বসতবাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। শুধু ঢালচর ইউনিয়নেই ধ্বংস হয়েছে প্রায় ৫০০টিরও বেশি ঘরবাড়ি।
প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে চাল, শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, “ত্রাণ কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রেখেছি। দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।”
স্থানীয়দের দাবি, দুর্বল অবকাঠামো ও যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে মেরিন ড্রাইভ এমন ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে—কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকৌশলগত ত্রুটি ছিল কি না।
Leave a Reply