যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার (৩১ মে) পেনসিলভেনিয়ার ওয়েস্ট মিফলিনে ইউএস স্টিলের ইরভিন ওয়ার্কস কারখানায় এক ভাষণে ঘোষণা দিয়েছেন—যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা স্টিলে শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করা হবে।
“আমরা শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে নিয়ে যাচ্ছি,” বলেন ট্রাম্প।
এই ঘোষণাটি এমন সময় এসেছে যখন ইউএস স্টিল ও জাপানের নিপ্পন স্টিলের মধ্যে একটি বিতর্কিত ‘মার্জার’ বা ‘অংশীদারিত্ব’ চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। এই চুক্তির ভবিষ্যত এবং তার প্রভাব নিয়ে শ্রমিক, বিনিয়োগকারী ও মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা উদ্বেগে রয়েছেন।
ট্রাম্প নিজের সামাজিক মাধ্যম Truth Social-এ জানিয়েছেন, ইউএস স্টিলের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গেই থাকবে এবং নিপ্পন ১৪ মাসে ১৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করবে।
তবে এপ্রিলের ৮ তারিখে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে জমা দেয়া এক নথি অনুযায়ী, ইউএস স্টিল নিপ্পনের অধীনস্থ একটি সম্পূর্ণ মালিকানাধীন সহযোগী কোম্পানি হবে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি নামমাত্র স্বতন্ত্র থাকলেও মালিকানা যাবে জাপানি কোম্পানির হাতে।
পেনসিলভেনিয়ার সিনেটর ডেভ ম্যাককরমিক জানিয়েছেন, এই চুক্তির অধীনে ইউএস সরকার পাবে একটি “গোল্ডেন শেয়ার”, যার মাধ্যমে কিছু বোর্ড সদস্য নিয়োগে সরকার ভেটো দিতে পারবে এবং জাতীয় স্বার্থে উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে।
আইনজীবী জেমস ব্রোয়ার বলেছেন, এই ‘গোল্ডেন শেয়ার’ মানে সরকারি মালিকানা নয়, বরং সরকারের জন্য নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করার চুক্তিভিত্তিক অধিকার।
হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টারাও নিশ্চিত করেছেন, নিপ্পন এই চুক্তিতে নিয়ন্ত্রণ পাবে না, বরং সীমিত অংশীদার হবে।
ইউনাইটেড স্টিলওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (USW), যারা শুরু থেকেই এই চুক্তির বিরোধিতা করে এসেছে, এখনো ট্রাম্পের ঘোষণার পূর্ণ প্রভাব মূল্যায়ন করতে পারেনি।
ইউনিয়নের সভাপতি ডেভিড ম্যাককল বলেন,
“আমরা আশঙ্কা করছি, বিদেশি কোম্পানি নিপ্পন, যারা অতীতে বারবার আমাদের বাণিজ্য আইন লঙ্ঘন করেছে, তারা দেশের অভ্যন্তরীণ স্টিল উৎপাদন ব্যবস্থায় ক্ষতিসাধন করতে পারে এবং হাজার হাজার শ্রমিকের চাকরি ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক দ্বিগুণ করার ঘোষণা শুধু স্টিল শিল্পেই নয়, গোটা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও বিদেশি বিনিয়োগনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে। যদিও “গোল্ডেন শেয়ার” ও “জাতীয় নিরাপত্তা চুক্তি”র মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ রাখার কথা বলা হচ্ছে, তবুও এই চুক্তি দেশি শিল্প ও শ্রমবাজারের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ—তা সময়ই বলে দেবে।
Leave a Reply