উত্তরাঞ্চলের শিল্পায়নের সম্ভাবনা দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকলেও, গ্যাস সংকট সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজশাহী, বগুড়া, নওগাঁ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জসহ বিভাগটির প্রতিটি জেলায় গড়ে উঠেছে শতাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু শিল্পখাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকায় অনেক কারখানাই কার্যত বন্ধ হওয়ার পথে।
২০০০-এর দশকে গ্যাস সংযোগের আশ্বাসে উদ্যোক্তাদের আগ্রহে উত্তরাঞ্চলে নতুন করে শিল্প সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায়। ২০১৩ সালে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল) আবাসিক এবং ৪০টি শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ শুরু করে। কিন্তু মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে, ২০১৬ সালে গ্যাস সংকটের অজুহাতে শিল্পখাতে নতুন সংযোগ স্থগিত করা হয়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে শিল্পায়নের গতি থেমে যায়। বিকল্প জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ে, যার ফলে উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। অনেক উদ্যোক্তা বাধ্য হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। বগুড়া বিসিক শিল্প নগরীসহ বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইরুল ইসলাম বলেন, “গ্যাস সংযোগ নিয়মিত পেলে উৎপাদন ব্যয় কমে আসবে, নতুন শিল্প গড়ে উঠবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।”
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইদুর রহমান বাচ্চু জানান, “শিল্পখাতে গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত করা গেলে একদিকে যেমন নতুন বিনিয়োগ আসবে, অন্যদিকে স্থানীয় জনগণের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে আর্থ-সামাজিক অবস্থারও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।”
এদিকে, পিজিসিএলের কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে সরাসরি বক্তব্য দিতে রাজি না হলেও, সংস্থার একাধিক সূত্র জানিয়েছে—নতুন করে সাতটি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আর গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করেছে ৮০টিরও বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
বগুড়া বিসিক শিল্প নগরীর উপমহাব্যবস্থাপক একেএম মাহফুজুর রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “দ্বিতীয় বিসিক শিল্প নগরীর কাজ এখনো চলমান। এটি চালু হলে শিল্পখাতে গ্যাস সংকট অনেকটাই কমে আসবে এবং এই অঞ্চলে কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।”
উল্লেখ্য, উত্তরাঞ্চলের শিল্পায়ন শুধু অর্থনীতিকেই চাঙ্গা করতে পারে না, এটি দেশের সামগ্রিক ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে—যদি গ্যাস সরবরাহের মতো মৌলিক অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা যায়।
Leave a Reply