রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ঐক্যের বার্তা প্রধান উপদেষ্টার, রবিবার বৈঠক অন্যান্য দলের সঙ্গে
ঢাকার বর্তমান উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কেন্দ্রে এখন একজন মানুষ—প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস। দেশের ত্রিমাত্রিক সংকটময় প্রেক্ষাপটে শনিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল—বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)—বৈঠক করেছে তার সঙ্গে। মূল এজেন্ডা ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভবিষ্যৎ, ও প্রতিশ্রুত নির্বাচনের সময়রেখা।
তিন দলই একমত—ড. ইউনুসকে নেতৃত্বে রেখে এগোতে চায় তারা। যদিও গণমাধ্যমে তার পদত্যাগ নিয়ে জোর গুঞ্জন চলছিল, শনিবারের পর একে অনেকেই বলছেন “বন্ধ অধ্যায়”। তবে রাজনৈতিক বাস্তবতা বলছে, সমাধানের পথ খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টাকে আরও দৃঢ় হতে হবে।
বিকেল সাড়ে সাতটায় শুরু হওয়া প্রথম বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির চার সদস্য। তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন—প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায় না বিএনপি। বরং দ্রুত নির্বাচন রোডম্যাপ ও উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠন চায় দলটি।
বৈঠক শেষে দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন,
“আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, সরকার পরিচালনায় যেসব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন, যেমন নিরাপত্তা উপদেষ্টা আসিফ মাহফুজসহ আরও দুইজন, তাদের অব্যাহতি চাই। এতে সরকারের নিরপেক্ষতা রক্ষা পাবে।”
পরবর্তী বৈঠকে অংশ নেয় জামায়াতে ইসলামি। যদিও প্রতিনিধিত্ব ছিল সীমিত, আলোচনায় গুরুত্বের ঘাটতি ছিল না। বৈঠকের পর দলের শীর্ষ নেতা বলেন,
“ড. ইউনুসের কিছু হতাশা ও কষ্ট ছিল। রাজনৈতিক চাপ এবং অসহযোগিতার কারণে পদত্যাগের ভাবনা এসেছিল তার মনে। কিন্তু আমাদের আশ্বাসে সে সংকট অনেকটাই কেটে গেছে।”
জামায়াত এবার প্রথমবারের মতো নির্বাচনের সময় ও কাঠামো নিয়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবি করেছে বলে জানা গেছে।
শেষ বৈঠকে ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সেখানেও উঠে আসে সরকারের অস্বস্তি, অচলাবস্থা ও প্রতিশ্রুত সংস্কার নিয়ে উদ্বেগ।
দলের প্রধান বলেন,
“ড. ইউনুস সরকার নয়, তিনি সংস্কারের প্রতীক। কিন্তু কিছু দল ও অংশবিশেষ তার কাঁধে অযাচিত চাপ দিচ্ছে। এতে সত্যিকারের পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে তার হতাশা বেড়েছে। আমরা চাই তিনি থেকে যান, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে যান।”
তিন বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান,
“সব দলই প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আস্থা ও সমর্থন জানিয়েছে। তারা মনে করেন তার নেতৃত্বে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। পদত্যাগের ভাবনা থাকলেও সেটা এখন আর আলোচনার কেন্দ্রে নেই।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সফলতা নির্ভর করছে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও আন্তরিক সহযোগিতার ওপর। শনিবারের বৈঠকগুলোতে সেই সম্ভাবনার ইঙ্গিত মিলেছে।
রবিবার আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন প্রধান উপদেষ্টা। রাজনীতির রুদ্ধ দরজা খোলার চাবি হয়তো লুকিয়ে আছে সেই বৈঠকগুলোতেই।
Leave a Reply