রাজধানীর রাস্তায় প্রতিদিন চোখে পড়ে ভাঙাচোরা, ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, অচল হয়ে পড়া গণপরিবহনের দৃশ্য। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় আশপাশ, ভাঙা গ্লাস আর মরিচায় ধরা বডি যেন যেকোনো সময় খসে পড়ে। ফ্যান, লাইটসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি অকেজো—অথচ এসব বাসই দিব্যি যাত্রী পরিবহন করছে। রাজধানীর প্রতিটি সড়কে এমন বাসের সরব উপস্থিতি যেন নিরাপদ ও মানবিক গণপরিবহন ব্যবস্থার মুখে চপেটাঘাত।
গত বছরের অক্টোবর মাসে ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধে ছয় মাসের আল্টিমেটাম দিয়েছিল সরকার। কিন্তু সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও বাস্তবে তার কার্যকারিতা চোখে পড়ছে না। যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। কেউ বলেন, “বৃষ্টির দিন গ্লাস ভাঙা থাকায় ভেতরে পানি পড়ে, বসা যায় না। ফ্যান চলে না, বাতাস পাওয়া যায় না। রাতে লাইটও জ্বলে না।”
পরিবহন মালিকরা দায় এড়াতে কাগজে-কলমে ফিটনেস থাকার কথা বললেও, বাস্তব অবস্থা তা স্বীকার করে না। কেউ কেউ বাসে সামান্য রং করে বা জোড়াতালি দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। “গাড়ির বাইরের প্লেট, সিট, জানালা সবই নড়বড়ে, আবার কাগজে আছে ‘ফিটনেস’ সীলমোহর”—এই দ্বৈততা নিয়েই চলছে পরিবহন ব্যবস্থা।
এমন দুরবস্থার জন্য নগর পরিকল্পনাবিদরা দায়ী করছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোকেই। তাদের ভাষায়, “একটি গোষ্ঠী পুরো শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থা জিম্মি করে রেখেছে। তারা চায় না ফিটনেসবিহীন গাড়ি সরানো হোক। তারা চায় না বাসগুলো আধুনিকায়ন হোক।”
এদিকে বিআরটিএ’র দাবি, ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ঢাকার আটটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যৌথ অভিযান চালিয়ে ১৬টি মামলায় ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২০টি বাস থেকে খুলে ফেলা হয়েছে অবৈধ হাইড্রলিক হর্ন। দুইটি বাস—‘সুরাগ’ ও ‘আকাশ’—যাদের ফিটনেস এক বছর আগেই বাতিল হয়েছে এবং কোনো বৈধ কাগজপত্রও নেই, সেগুলো ডাম্পিং স্টেশনে পাঠানো হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, “এখন থেকে এসব বাস যতবার চোখে পড়বে, ততবারই ডাম্পিংয়ে পাঠানো হবে। এ নিয়ে কোনো ছাড় থাকবে না।”
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—নানা ঘোষণার পর, একের পর এক অভিযান চালানোর পরও রাজধানীবাসী কবে পাবে একটি নিরাপদ, ফিটনেসসম্পন্ন ও মানবিক গণপরিবহন ব্যবস্থা? বারবার প্রতিশ্রুতি, কিন্তু বাস্তবতার মাটিতে তার প্রতিফলন কোথায়? শহরজুড়ে ঘুরছে সেই প্রশ্ন—জনভোগান্তির শেষ কোথায়?
Leave a Reply