চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক সম্ভাবনায় যুক্ত হচ্ছে এক নতুন অধ্যায়। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি এয়ার শিপমেন্ট চালুর সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে তৈরি পোশাকসহ রফতানিপণ্য পাঠাতে ভারতকে বাইপাস করে সরাসরি ট্রান্সশিপমেন্টের পথ খুলে দিতে যাচ্ছে এই উদ্যোগ।
সরকারি অনুমোদন মিললেই চলতি মে মাস থেকেই এয়ার শিপমেন্ট কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ২৭০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার দুটি ওয়্যারহাউজ প্রস্তুত করা হয়েছে। সচল করা হয়েছে দুটি আধুনিক স্ক্যানার এবং ওয়েট মেশিন। ওয়্যারহাউজ দুটি—১৭০ ও ১২০ মেট্রিক টনের—সম্পূর্ণ খালি করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য। পাশাপাশি নিরাপত্তা ও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য প্রক্রিয়াগত দিকগুলোও নিশ্চিত করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের দুইটি ইপিজেড ছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪০০-র বেশি গার্মেন্টস কারখানা থাকলেও, দীর্ঘদিন ধরেই এয়ার শিপমেন্ট সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল এই অঞ্চল। ব্যবসায়ীদের জন্য তাই ঢাকা হয়ে পণ্য পাঠানো ছিল বাধ্যতামূলক, যা সময়, খরচ ও শিডিউল জটিলতায় ভোগাচ্ছিল ব্যবসায়ী সমাজকে।
বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীর বলেন, “ট্রাক থেকে কার্গো নামানোর পর সিকিউরিটি চেকিং সম্পন্ন করে কাস্টমস যাচাই-বাছাই করবে। এরপর নির্দিষ্ট বিমানের মাধ্যমে পণ্য পাঠানো হবে। সব প্রস্তুতি আমরা নিয়ে ফেলেছি।”
বাংলাদেশ গার্মেন্টস প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে দীর্ঘদিন কোনো কার্যকর কার্গো সাপোর্ট ছিল না। তাই পণ্য পাঠাতে ঢাকার উপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে সেখানেও ফ্লাইট শিডিউলের সংকটে ভোগার অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে এয়ার শিপমেন্ট চালু হওয়া অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।”
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব বলেন, “চট্টগ্রাম এয়ার শিপমেন্ট চালু হলে রফতানিকারকদের জন্য এটি হবে বড় সহায়তা। একদিকে সময় বাঁচবে, অন্যদিকে বৈদেশিক ক্রেতারাও দ্রুত ডেলিভারিতে সন্তুষ্ট থাকবেন।”
একসময় চট্টগ্রাম থেকে ইত্তেহাদ ও এমিরেটসের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে কার্গো পণ্য পাঠানো হলেও, ২০২১ সালের পর থেকে বিশেষায়িত কার্গো ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে যাত্রীবাহী বিমানের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে পণ্য পাঠাচ্ছিলেন।
বর্তমানে শাহ আমানত বিমানবন্দরে এয়ার শিপমেন্ট পুনরায় চালু করতে তিনটি ধাপে সংস্কার কাজ চলছে। কাস্টমস বিভাগও কার্গো শাখায় স্থায়ীভাবে জনবল নিয়োগ দিতে যাচ্ছে।
বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, “প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে—১) ওয়্যারহাউজ সক্ষমতা, যা বর্তমানে ২৭০ টন। ২) দুটি স্ক্যানার মেশিন সক্রিয় করা হয়েছে। ৩) সপ্তাহে ২টি ওয়াইড বডি কার্গো ফ্লাইট হ্যান্ডেল করার পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করেছি।”
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে ৭ লাখ ৩২ হাজার কেজি কার্গো পণ্য রফতানি হয়েছে, যা থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ২০২৪ সালে মোট কার্গো রফতানির পরিমাণ ছিল ৪৩ লাখ ১২ হাজার কেজি।
বহুদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শাহ আমানত বিমানবন্দর এখন প্রস্তুত আন্তর্জাতিক বাজারে চট্টগ্রামের রফতানি পণ্যের সরাসরি সংযোগ স্থাপনের জন্য। অনুমোদন মিললেই খুলে যাবে এক নতুন দিগন্ত, যা চট্টগ্রামের অর্থনীতি এবং রফতানিখাতে আনবে নতুন গতি।
Leave a Reply