আগামী জাতীয় বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আসছে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার। বাড়ছে ভাতার পরিমাণ, পরিবর্তন আসছে কর্মসূচির কাঠামোতেও। সরকারের লক্ষ্য—সত্যিকারের উপকারভোগীকে চিহ্নিত করে অনিয়ম বন্ধ করা এবং ভর্তুকির অর্থ যেন সঠিকভাবে ব্যয় হয়, তা নিশ্চিত করা।
বর্তমানে দেশে প্রায় ১৪০টি সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চলমান রয়েছে। বাজেটের প্রায় ১৭ শতাংশ অর্থই বরাদ্দ রাখা হয়েছে এ খাতে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এত বড় বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও মাঠপর্যায়ে প্রকৃত দরিদ্ররা অনেক সময় এই সহায়তা থেকে বঞ্চিত হন, অন্যদিকে অযোগ্য ব্যক্তিরাও দুর্নীতির মাধ্যমে ভাতা তুলে নিচ্ছেন। এতে ‘মিস টার্গেটিং’ বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দা আব্দুল মতিনের অভিজ্ঞতাই এর উদাহরণ। জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছেও তিনি পান না কোনো সরকারি সহায়তা। বললেন, “সরকারি ভাতা এখন সরকারের জিনিস হয়ে গেছে। কেউ পায়, কেউ পায় না। কিভাবে আবেদন করতে হয়, কোথায় জমা দিতে হয়—এসবও জানি না।”
একই চিত্র মুজিবুর রহমানের ক্ষেত্রেও। বয়সজনিত জটিলতা থাকলেও তিনি বঞ্চিত বয়স্ক ভাতার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনা থেকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতগুলো কর্মসূচি থাকলেও বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতা এবং জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত সঠিকভাবে টার্গেটিং নিশ্চিত করা না যাবে, ততক্ষণ এই বিশাল বরাদ্দের সুফল জনগণের হাতে পৌঁছাবে না। বাজেট বাড়ালেই সমস্যার সমাধান হয় না, প্রয়োজন সুশাসন।”
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসছে বাজেটে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী-নিগৃহীতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধীসহ অন্তত ১০টি ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। একই সঙ্গে উপকারভোগী নির্বাচনের পদ্ধতিতে আনা হচ্ছে প্রযুক্তিনির্ভর পরিবর্তন, যাতে অনিয়ম কমে এবং সাহায্য পৌঁছায় প্রকৃত দরিদ্রদের কাছে।
তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই বাজারে ৫০০, ৭০০ বা ১০০০ টাকার ভাতা দিয়ে আদৌ কি কোনো দরিদ্র পরিবার এক সপ্তাহ চলতে পারে? এমন প্রশ্ন তুলে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিমাণ যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতা না হয়। বরং এমন অঙ্ক নির্ধারণ করতে হবে যা সত্যিকারের সহায়তা হিসেবে পরিবারগুলোর জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
এদিকে, ভিজিডি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি উদ্যোগের বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়েও ভাবছে অর্থ বিভাগ। সরকারের একাধিক সংস্থা ইতোমধ্যেই মাঠপর্যায়ে জরিপ শুরু করেছে, যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে যথাযথভাবে সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করা যায়।
আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের এ সংস্কার বাস্তবায়িত হলে তা হতদরিদ্রদের জন্য একটি কার্যকর সহায়তা কাঠামো গড়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হতে পারে—এমন আশা সংশ্লিষ্টদের।
Leave a Reply