মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম অস্থির সময়কে ঘিরে ইরাকের বাগদাদে অনুষ্ঠিত হলো ৩৪তম আরব লীগ সম্মেলন, যেখানে অন্তত ২০টি আরব দেশের নেতারা একত্রিত হন গাজা সংকট, যুদ্ধপরবর্তী পুনর্গঠন এবং আঞ্চলিক ঐক্য জোরদার নিয়ে আলোচনা করতে।
সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা এবং মানবিক বিপর্যয়। মুসলিম নেতারা একবাক্যে এই আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানালেও, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গাজার পরিস্থিতির জন্য সরাসরি দোষ চাপিয়েছেন হামাসের উপর।
মাহমুদ আব্বাস তার ভাষণে বলেন, “গাজায় হামাসের একক কর্তৃত্ব ও কার্যক্রম আজ ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে বড় সংকট ডেকে এনেছে। স্বাধীনতার সংগ্রাম এক জিনিস, কিন্তু অরাজকতা, অস্ত্র এবং একতরফা সিদ্ধান্তে জাতি বিপন্ন হয়।”
তিনি হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানান এবং গাজা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকল পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দেন।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি গাজার পরিস্থিতিকে আখ্যা দেন, “এটা একটি চলমান দুঃস্বপ্ন।”
তিনি বলেন, “গাজাবাসীদের লক্ষ্য করে যেভাবে বর্বরতা চালানো হচ্ছে, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।”
জর্ডান ও লেবাননের প্রতিনিধিরাও গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে একটি স্পষ্ট সময়সীমাসহ আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের দাবি জানান।
ইরাকের সহায়তা ঘোষণা: ২ কোটি ডলার তহবিল ইরাকের প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে গাজার পুনর্গঠনে ২০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন,
“আমরা যুদ্ধের পর গাজার পুনর্গঠন ও নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে ১৮টি যৌথ পদক্ষেপ হাতে নিচ্ছি। এর মধ্যে অন্যতম হলো পুনর্গঠনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট তহবিল গঠন।”
এই সম্মেলনে একমাত্র ইউরোপীয় দেশ হিসেবে অংশ নেয় স্পেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন,
“ফিলিস্তিনের রক্তপাত আমরা চুপচাপ দেখে যেতে পারি না। ইসরায়েলের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির এখনই সময়।”
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও এক ভার্চুয়াল বার্তায় বলেন,
“আমরা একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন প্রস্তুত করছি, যেখানে তুলে ধরা হবে ইসরায়েল কীভাবে ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে।”
আরব লীগ সম্মেলনের বার্তা ছিল দ্ব্যর্থহীন গাজা এখন শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি মানবিকতার একটি পরীক্ষাক্ষেত্র।
ইসরায়েলের উপর চাপ সৃষ্টি, গাজার পুনর্গঠন, এবং ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ ঐক্য এই তিন স্তম্ভকে ঘিরেই আগামী দিনের কূটনীতি গড়ে উঠবে। তবে, মাহমুদ আব্বাসের মন্তব্য স্পষ্ট করেছে, শুধু বাহ্যিক আগ্রাসন নয়, ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও এখন সমাধানের কেন্দ্রে।
Leave a Reply