সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সান্ডা নিয়ে আলোচনার ঝড়। বিশেষ করে ফেসবুকে এক ব্যক্তির ছেলের জন্য সান্ডা ধরা, রান্না ও পরিবেশনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—এই প্রাণীটি খাওয়া কি ইসলামে বৈধ?
এই প্রশ্নের জবাব দিতে হলে, আমাদের আগে জানতে হবে সান্ডা কী এবং ইসলামী শরিয়তে এটি সম্পর্কে কী বলা হয়েছে।
সান্ডা (বৈজ্ঞানিক নাম Uromastyx) মূলত একটি তৃণভোজী মরুভূমির গিরগিটি, যা মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার শুষ্ক অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই প্রাণীর শরীর মোটা, মাথা চ্যাপ্টা, এবং পা শক্তিশালী। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও পরিচিত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে—কাঁটাযুক্ত মোটা লেজ, যা হুমকির সময় আত্মরক্ষার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এটি মূলত গাছের পাতা, ফুল, শুকনো ঘাস ও বীজ খায়। তবে ছোট বয়সে মাঝে মাঝে কীটপতঙ্গও খেয়ে থাকে। দিনচর ও নিরীহ স্বভাবের কারণে অনেক দেশে এটি পোষা প্রাণী হিসেবেও জনপ্রিয়।
আরবিতে এই প্রাণীকে বলা হয় “দাব্ব” (الضبّ)।
ইসলামে সান্ডা (দাব্ব) খাওয়া বৈধ কি?
ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে সান্ডা বা দাব্ব খাওয়া হারাম নয়। তবে এটি খাওয়া নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে—রসুলুল্লাহ (সা.) নিজে দাব্ব খাননি, তবে তিনি এটিকে হারামও বলেননি। (তিরমিজি)
একাধিক সহিহ হাদিসে পাওয়া যায়, খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) নবীজি (সা.)-এর সামনে দাব্ব খেয়েছিলেন। রাসূল (সা.) তাকে তা খেতে নিষেধ করেননি বরং পরিষ্কার করে বলেছিলেন, “আমাদের এলাকায় এটি পাওয়া যায় না, তাই আমি নিজে খেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না।”
(সূত্র: সহিহ বুখারি ৫৪০০, ৫৫৩৭; সহিহ মুসলিম ১৯৪৫, ১৭৪৬; আহমাদ ১৬৮১৫)
ফকিহগণের দৃষ্টিভঙ্গি
ইমাম তিরমিজি (রহ.) উল্লেখ করেছেন, আহলে ইলমদের মধ্যে দাব্ব খাওয়া নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।
হানাফি মাজহাব অনুযায়ী, এটি খাওয়াকে মাকরুহ বা নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, মালিকি, শাফেয়ি এবং হাম্বলি মাজহাব-এর বহু আলেম একে জায়েজ বা বৈধ বলেছেন।
তবে সব ক্ষেত্রেই স্পষ্ট, দাব্ব খাওয়া হারাম নয়।
সামাজিক প্রেক্ষাপট ও সতর্কতা
যদিও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সান্ডা খাওয়া নিষিদ্ধ নয়, তবুও স্থানীয় সংস্কৃতি, পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যবিধি এবং ভোক্তার স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনায় এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উত্তম। কোনো জিনিস হালাল হলেও তা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য কি না, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।
সান্ডা খাওয়া ইসলামে হারাম নয়—এটা স্পষ্টভাবে হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল (সা.) নিজে তা না খেলেও সাহাবিদের খাওয়ায় বাধা দেননি। তবে এই খাবারটি প্রতি অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ও ভৌগলিক প্রেক্ষাপটে ভিন্নভাবে দেখা হতে পারে।
ধর্মীয়ভাবে জায়েজ হলেও, স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক বিবেচনায় ব্যক্তিগত রুচি ও সচেতনতা মেনে চলা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
Leave a Reply