যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন গোপনে একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, যার আওতায় গাজা উপত্যকা থেকে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্থায়ীভাবে লিবিয়ায় স্থানান্তর করা হবে—এমন তথ্য উঠে এসেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের এক এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোপন এই কৌশল সম্পর্কে অবগত পাঁচজন সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বলা হচ্ছে, এটি ট্রাম্পের “গাজা দখলের প্রস্তাবনার” পরবর্তী ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যার মাধ্যমে গাজা ফাঁকা করে সেখানে রাজনৈতিক বা সামরিকভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সহজতর করা হবে।
এনবিসির অনুসন্ধানে জানা যায়, পরিকল্পনাটি এতটাই অগ্রাধিকার পেয়েছে যে, ওয়াশিংটন ইতোমধ্যে লিবিয়ার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। বিশেষ করে ২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে জব্দ থাকা লিবিয়ার সম্পদ মুক্ত করার প্রলোভনে এই চুক্তিকে বাস্তবায়নের পথ খোঁজা হচ্ছে।
এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন গাদ্দাফির পতনের সময়কার দুই মার্কিন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং এক সাবেক মার্কিন প্রশাসনিক সদস্য, যাঁরা জানিয়েছেন—লিবিয়ায় ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ার ১০ বছরের বেশি সময় ধরে জব্দকৃত সম্পদ ছাড় করে দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারিভাবে অস্বীকৃতি, তবু সন্দেহ রয়ে যায় যদিও হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার দাবি, এই রিপোর্ট “অসমর্থিত ও ভিত্তিহীন”। এনবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “মাঠপর্যায়ের বাস্তবতায় এই পরিকল্পনার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি, এবং এর কোনো অর্থও নেই।”
কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বারবার অস্বীকার করেও পরে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদাহরণ অতীতে বহুবার দেখা গেছে।
হামাসের কড়া প্রতিক্রিয়া: ‘আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে ফিলিস্তিনিরা’
গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস জানায়, এই ধরনের কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে তাদেরকে অবহিত করা হয়নি। সংগঠনের সিনিয়র নেতা বাসেম নাইম বলেন:
“ফিলিস্তিনিরা তাদের মাতৃভূমির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। তারা তাদের ভূমি, পরিবার ও ভবিষ্যতের জন্য শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করতে প্রস্তুত। অন্য কেউ এসে আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে—এটা কখনোই মেনে নেওয়া যাবে না।”
ট্রাম্পের বিবৃতি: ‘গাজায় বহু মানুষ অনাহারে’, তবে পরিকল্পনা নিয়ে নীরবতা
অন্যদিকে, একই দিন সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন,
“আমরা গাজার দিকেই নজর রাখছি। ওখানে বহু মানুষ অনাহারে রয়েছে, এবং আমরা এই পরিস্থিতির যত্ন নেব।”
তবে তিনি ইসরায়েলের লাগাতার হামলা বা ফিলিস্তিনিদের লিবিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি।
সরকারি নিশ্চুপতা: পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কি সময়ের অপেক্ষা মাত্র?
এই রিপোর্টে এখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বা লিবিয়া সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে আন্তর্জাতিক পরিসরে ইতোমধ্যে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিষয়টি মানবপাচারের নতুন রূপ হিসেবে অভিহিত করছে।
রাজনৈতিক পরিকল্পনা, নাকি বৈশ্বিক মানবিক সংকটের নতুন মাত্রা?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গাজাবাসীদের লিবিয়ায় স্থানান্তরের এ পরিকল্পনা কেবল রাজনৈতিক বাস্তবতার নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। তাছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে অস্থিরতা আরও বাড়ার আশঙ্কাও অমূলক নয়।
Leave a Reply