মাগুরার বহুল আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মামলায় মূল আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে এই মামলায় অভিযুক্ত তার স্ত্রী জাহেদা বেগম এবং দুই ছেলে সজীব শেখ ও রাতুল শেখ খালাস পেয়েছেন।
শনিবার (১৭ মে) সকালে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এই রায় ঘোষণা করেন।
আলোচিত এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া নজিরবিহীন দ্রুততায় সম্পন্ন হয়। গত ১৩ এপ্রিল পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করে, আর ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠন শেষে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক বিচার। ২৭ এপ্রিল শুরু হওয়া সাক্ষ্যগ্রহণে রাষ্ট্রপক্ষের ২৯ জন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দেন।
ছুটির দিন বাদ দিয়ে মাত্র ১২ কার্যদিবসে বিচার সম্পন্ন হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, আসামি হিটু শেখ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে মেডিকেল রিপোর্ট এবং সাক্ষীদের জবানবন্দি মিলে তার বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
গত ৬ মার্চ মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে মাত্র আট বছর বয়সী আছিয়া ধর্ষণের শিকার হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে, পরে ফরিদপুর মেডিকেলে নেয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং পরে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ১৩ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
এই ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। সামাজিক মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।
আছিয়ার পরিবারের সদস্যরা রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, “আমরা চাই ছিলাম ন্যায্য বিচার। আজকের রায়ে কিছুটা হলেও আমাদের মনের জ্বালা প্রশমিত হয়েছে।”
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) বলেন, “এই রায় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। দ্রুত বিচার এবং সঠিক প্রমাণ উপস্থাপন কীভাবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে, তা এই মামলায় প্রমাণিত হয়েছে।”
এই রায় দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা দৃঢ় করতে পারে, বিশেষ করে শিশু ও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার মামলায়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণই পারে এমন অপরাধ রুখতে।
Leave a Reply