পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা এখনো ঠান্ডা হয়নি, এর মাঝেই ভারতের সামনে নতুন করে উদ্বেগের নাম চীন। অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বেইজিং, যার ফলে দুই পরাশক্তির মধ্যে সীমান্তে উত্তেজনার আবহ ঘনীভূত হচ্ছে।
চীনের তরফ থেকে সম্প্রতি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের বেশ কিছু এলাকা নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন নামে প্রকাশ করা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাফ জানিয়েছেন, “নাম পরিবর্তন করে ইতিহাস বদলানো যায় না। অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, চীনের দাবি ভিত্তিহীন।”
বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের আবহে ভারতের মনোযোগ যখন পশ্চিম সীমান্তে, তখন পূর্ব সীমান্তে চীন তার সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে। অরুণাচলের ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের কথা মাথায় রেখেই, অঞ্চলটিতে চীনের আগ্রাসনকে কৌশলগত ‘মুভ’ হিসেবেই দেখছেন অনেকে।
চীনের দাবি, অরুণাচল আসলে “দক্ষিণ তিব্বত” এবং সেই সূত্রেই অঞ্চলটির উপর ঐতিহাসিক মালিকানা তাদের। ভারত এ দাবিকে বারবার প্রত্যাখ্যান করে আসছে। অথচ বাস্তবচিত্র বলছে, চীনা বাহিনী সীমান্ত লঙ্ঘন করে দিবাং, তাওয়াং এবং দিব জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় অনুপ্রবেশ করেছে — যেগুলোর অনেকগুলোর ছবি উপগ্রহেও ধরা পড়েছে।
২০২৩ সালে চীন অরুণাচলের অন্তত ৩০টি এলাকা নতুন নামে প্রকাশ করে, এবং ২০২৫ সালের শুরুতে সেই সংখ্যা আরও বাড়িয়েছে বলে দাবি করছে ভারতীয় গণমাধ্যম। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের ফাঁকেই চীন অরুণাচলে অবস্থান দৃঢ় করার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, তিব্বতের ব্রহ্মপুত্র নদে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেইজিং, যা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ চরমে। নদীর গতিপথে পরিবর্তন ঘটলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পানিসংকটের শঙ্কা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করছেন পানি বিশেষজ্ঞরা।
সীমান্ত উত্তেজনার ইতিকথাও খুব দীর্ঘ। ২০১৯ সালে অস্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের পর ২০২০ সালে অরুণাচলের ভিতরে ঢুকে পড়ে চীনা সেনা। লাদাখের গালোয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘাতে প্রাণ হারান একাধিক ভারতীয় সেনা সদস্য। এর জের ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল দফায় দফায় বৈঠক করেন চীনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে। সে সময় চীনা বাহিনী সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হলেও, কয়েক মাসের মধ্যেই সীমান্তবর্তী এলাকায় নতুন সেনাঘাঁটি নির্মাণ শুরু করে চীন।
ভারতের প্রতিরক্ষা নীতির দুর্বলতা এবং যুদ্ধবিমানে চীনের আধিপত্য এ সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে। একদিকে পাকিস্তান, অন্যদিকে চীন — দুই ফ্রন্টে চাপের মুখে রয়েছে ভারতীয় কূটনীতি ও প্রতিরক্ষা নীতি।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তা সামরিক সংঘর্ষে রূপ নিতে বেশি সময় লাগবে না। কূটনৈতিক কৌশল ও নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার না করলে চীনের আগ্রাসন আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
Leave a Reply