রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে ইস্তানবুলে প্রত্যক্ষ শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে এখনও মুখ খোলেনি ক্রেমলিন। যুদ্ধ থামাতে আন্তর্জাতিক চাপ বেড়ে চললেও, এই অনিশ্চয়তা মেঘের ছায়া ফেলেছে সম্ভাব্য ঐতিহাসিক বৈঠকের ওপর। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর এটিই হতে পারত প্রথম সরাসরি আলোচনা।
বুধবার (১৪ মে) ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশ পেলেই তুরস্কে রাশিয়ান প্রতিনিধিদলের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
“রাশিয়ান প্রতিনিধি দল ১৫ মে ইস্তানবুলে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের অপেক্ষায় থাকবে,” বলেন পেসকভ। “তবে এখনো প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এমন কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।”
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোয়ানের মধ্যস্থতায় আলোচনাটি বৃহস্পতিবার ইস্তানবুলে হওয়ার কথা। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এরইমধ্যে জানিয়েছেন, তিনি বুধবার অথবা বৃহস্পতিবার তুরস্কে এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং পুতিনকে সেখানে উপস্থিত হওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন।
“যদি তিনি না আসেন, তাহলে সেটি প্রমাণ করবে যে মস্কো শান্তি চায় না,” বলেন জেলেনস্কি।
এই আলোচনার সম্ভাবনা ঘিরে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে যখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফরের মধ্যেই জানান, যদি পুতিন যান, তবে তিনিও তুরস্কে যেতে পারেন।
“সম্ভাবনা আছে,” বলেন ট্রাম্প। “যুদ্ধ শেষ করা গেলে আমি অবশ্যই চিন্তা করব। আমি জানি পুতিন চাইবেন আমি থাকি।”
এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইতোমধ্যেই শুক্রবার ইস্তানবুল যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ট্রাম্প রুবিওর ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, “মার্কো যাচ্ছে এবং সে খুবই কার্যকরভাবে কাজ করছে।”
আলোচনার উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে পুতিনকে আলোচনায় অংশ নিতে বলবেন। চীনের একটি আঞ্চলিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে বেইজিং ছাড়ার আগে লুলা বলেন:
“বলতে আমার কিছুই যায় আসে না—‘শোনো কমরেড পুতিন, ইস্তানবুলে যাও এবং আলোচনা করো, ধৈর্য ধরো!’”
লুলা চীন সফর শেষে রাশিয়ায় একটি সংক্ষিপ্ত যাত্রা করবেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি চীন ও ব্রাজিল এক যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, যুদ্ধের অবসানে সরাসরি আলোচনা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।
ইতোমধ্যে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্রাজিলকে আহ্বান জানিয়েছে যেন রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠক নিশ্চিত করা যায়।
এদিকে, আলোচনার প্রস্তুতির মধ্যে ইউরোপে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মন্তব্যেরও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্রেমলিন। ম্যাক্রোঁ ফরাসি টেলিভিশন চ্যানেল TF1-কে জানান, ইউরোপে নিরাপত্তা বাড়াতে ফ্রান্স তাদের পারমাণবিক বোমার বিমানগুলো অন্যান্য দেশে স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।
“আমেরিকানদের বোমা আছে বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি ও তুরস্কে,” বলেন ম্যাক্রোঁ। “আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আগামী সপ্তাহ ও মাসে আমি বিষয়টির একটি স্পষ্ট কাঠামো উপস্থাপন করব।”
ক্রেমলিন এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে জানিয়েছে, এটি ইউরোপে আরও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বর্তমানে ফ্রান্সই ইউরোপীয় ইউনিয়নের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ।
জেলেনস্কি প্রস্তুত, এরদোয়ান মধ্যস্থতাকারী, লুলা পুতিনকে চাপ দিচ্ছেন, ট্রাম্প ইঙ্গিত দিচ্ছেন—সবকিছুই এখন পুতিনের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে। তিনি আলোচনার টেবিলে বসবেন, না কি এই সুযোগকে অগ্রাহ্য করবেন—তা নির্ধারণ করতে পারে যুদ্ধের পরবর্তী গতি।
Leave a Reply