গাজা সিটি: গাজায় মানবিক সংকট ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বিমান ও স্থল হামলায় মঙ্গলবার সকাল থেকে অন্তত ৮০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে শুধু উত্তর গাজাতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ জন, এমন তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসা কর্মকর্তারা।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু-কে উদ্দেশ করে হামাস অভিযোগ তুলেছে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে “গণহত্যা বাড়িয়ে দিচ্ছেন” এবং সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণ করে “কোনো ধরনের বিজয় অর্জন করতে পারবেন না”।
এদিকে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ তত্ত্বাবধানে গাজায় ত্রাণ বিতরণের পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাজ্য। তারা বলেছে, এমন কৌশল সংকটের আসল সমাধান নয়। বরং তারা জোর দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলকে দুই মাস ধরে আরোপিত অবরোধ এখনই তুলে নিতে হবে—যা গাজায় খাদ্য, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানির প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতির মাঝেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি বর্তমানে সৌদি আরবে সফরে রয়েছেন, দাবি করেছেন তিনি গাজায় চলমান যুদ্ধ “যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে চাচ্ছেন”। কিন্তু নেতানিয়াহু স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “যুদ্ধ থামানোর কোনো প্রশ্নই নেই”।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৫২,৯০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,১৯,৭২১ জন আহত হয়েছেন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, বাস্তব মৃত্যু সংখ্যা আরও বেশি—৬১,৭০০-এরও বেশি। কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া হাজার হাজার মানুষ এখনও নিখোঁজ, এবং তাদের জীবিত থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে চালানো এক আক্রমণে ১,১৩৯ জন ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২০০ জনের বেশি জিম্মি হন। এরপর থেকেই ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে “সম্পূর্ণ যুদ্ধ” ঘোষণা করে।
এদিকে, গাজায় নাগরিক এলাকা, হাসপাতাল এবং শরণার্থী শিবির লক্ষ্য করে চালানো হামলার ফলে আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষোভ বাড়ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় এখন পূর্ণমাত্রার মানবিক বিপর্যয় চলছে, যা থামাতে না পারলে পুরো অঞ্চলই অনির্দেশ্য অস্থিতিশীলতায় পড়তে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহুর এই আগ্রাসী মনোভাব অনেকটাই ঘরোয়া রাজনীতির চাপ থেকে উদ্ভূত, যার বাস্তবিক কৌশলগত ভিত্তি খুব দুর্বল। অপরদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তা ইসরায়েলের এমন সহিংসতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎসাহ দিচ্ছে।
যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক আলোচনা কার্যকর না হওয়ায়, গাজাবাসী এখন সম্পূর্ণ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে এখন স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ— শুধু বিবৃতি নয়, দরকার ত্বরিত কূটনৈতিক, আইনি ও মানবিক পদক্ষেপ।
যখন গাজার আকাশে অবিরাম বোমা বিস্ফোরণ, শহরের গায়ে শুধুই ধ্বংসের চিহ্ন, এবং লাশের স্তূপে ভরে উঠছে হাসপাতালের করিডোর— তখন প্রশ্ন উঠছেই:
আর কত মৃত্যু হলে বিশ্ব বলবে, “এবার যথেষ্ট”?
Leave a Reply