ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই ভারতের সর্বোচ্চ কূটনৈতিক কর্মকর্তা পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে কটাক্ষ, ট্রোলিং ও অনৈতিক আক্রমণ।
বিশেষ করে বিক্রম মিশ্রির একমাত্র কন্যা ডিডন মিশ্রিকে ঘিরে ব্যক্তিগত আক্রমণ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে অনধিকৃতভাবে মোবাইল নম্বর ফাঁস করে দেওয়া হয়। এ ঘটনার পরপরই বিক্রম মিশ্র নিজের এক্স অ্যাকাউন্ট লক করে দেন এবং প্রাইভেসি সেটিংস পরিবর্তন করে বাইরের কারও মন্তব্য করার সুযোগ বন্ধ করেন।
‘গদ্দার’ থেকে ‘নির্লজ্জ পরিবার’: সীমালঙ্ঘন ট্রোলিংয়ে ভারতের কিছু উগ্র জাতীয়তাবাদী অনলাইন গোষ্ঠী বিক্রম মিশ্রকে ‘গদ্দার’, ‘দেশদ্রোহী’ বলে আখ্যা দিয়েছে। একইসঙ্গে, তার কন্যার প্রতি ব্যবহার করেছে অশালীন ও অবমাননাকর ভাষা। আন্তর্জাতিক কূটনীতির জটিল প্রেক্ষাপটে এমন পরিণতিসম্পন্ন আলোচনার পেছনে যারা কাজ করছেন, তাদের পেশাদারিত্বকে ব্যক্তিগত আক্রমণে পরিণত করা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক মহলে প্রতিবাদ এই ঘটনায় ভারতের রাজনৈতিক মহলে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব কঠোর ভাষায় সমালোচনা করে বলেন—
“দেশের জন্য সৎভাবে কাজ করা একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে এভাবে আক্রমণ করা অনুচিত ও নিন্দনীয়। সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, কর্মকর্তা শুধু তা বাস্তবায়ন করেন। অথচ কিছু অপরাধপ্রবণ গোষ্ঠী ব্যক্তিগত হামলায় লিপ্ত হয়ে দেশের প্রশাসনিক শৃঙ্খলাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”
তিনি আরও বলেন,
“বিজেপি সরকারের দায়িত্ব ছিল এমন কুৎসা রটনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও কর্মকর্তার সম্মান রক্ষা করা। কিন্তু তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণ শুধু প্রশাসনিক কর্মকর্তার মনোবল ভাঙে না, বরং এটি গণতান্ত্রিক সহনশীলতা ও কূটনৈতিক পরিবেশের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যুদ্ধবিরতির মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে, কূটনৈতিক আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের টার্গেট করা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ভুল বার্তা দিতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া ট্রোলিং যখন দায়িত্বশীল রাষ্ট্রচিন্তার জায়গা দখল করে নেয়, তখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও নীতিনির্ধারণের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়—এমনটাই মনে করছেন অভিজ্ঞরা।
Leave a Reply