বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নতুন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাস এবার আর হঠাৎ পাওয়া দায়িত্বে নয়—পুরোপুরি সময় নিয়ে দলের ভবিষ্যতের রূপরেখা সাজাতে চান তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৬ পর্যন্ত বিসিবি’র আস্থাভাজন লিটন, এবার প্রথমবারের মতো পূর্ণ মেয়াদে নেতৃত্বের দায়িত্ব পেলেন।
১২ মে প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে লিটন জানালেন, এবার আর তাৎক্ষণিক সিরিজ পরিকল্পনায় আটকে থাকতে চান না। তিনি ভাবছেন দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে—যেখানে দলের গঠন, খেলোয়াড়দের মানসিক প্রস্তুতি ও ধারাবাহিকতা থাকবে তার কৌশলগত পরিকল্পনার কেন্দ্রে।
“আগে পরিকল্পনাগুলো সিরিজ কেন্দ্রিক ছিল, এখন যেহেতু দীর্ঘ সময়ের জন্য দায়িত্ব পেয়েছি, তাই ভবিষ্যতের লক্ষ্যে কাজ করব। এখন জানি, আমার সামনে ২০২৬ পর্যন্ত সময় আছে, সেই হিসেবে দলকে গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগও আছে,” বললেন লিটন।
তবে শুধু দায়িত্ব নয়, নিজেকেও নতুনভাবে প্রমাণ করতে প্রস্তুত লিটন। বহুবার অধিনায়কত্বের আলোচনায় থেকেও পূর্ণ সময়ের দায়িত্ব না পাওয়া এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান এবার নিজের নেতৃত্বে অর্জন করতে চান বড় কিছু।
“কোনো জেদের জায়গা নেই। প্রত্যেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারই পারফর্ম করতে চায়, আর অধিনায়ক হলে সেটা আরও গুরুত্বপূর্ণ। আমার অধীনেই যদি বড় কিছু হয়, সেটা হবে সবচেয়ে বড় অর্জন,” আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলেন তিনি।
নেতৃত্বে তার দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই খেলোয়াড়-কেন্দ্রিক। মাঠের বাইরেও সতীর্থদের প্রয়োজন, সমস্যা ও মতামত বোঝার চেষ্টা করবেন বলে জানান লিটন। খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগই হবে তার প্রধান কৌশল।
“দল এগোবে ক্রিকেটারদের উপর নির্ভর করে। আমার দায়িত্ব হবে তাদের কথা শোনা, কোথায় উন্নতির সুযোগ আছে সেটা বোঝা। বিসিবির চেয়ে বেশি সময় খেলোয়াড়দের সাথেই কাটাব,” বলেন টাইগার অধিনায়ক।
তবে ব্যাট হাতে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স তার পক্ষে যাচ্ছে না। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে রান খরায় ভুগছেন লিটন। অধিনায়ক হওয়ার পর এই চাপ আরও বাড়বে কি না—এই প্রশ্নে তার জবাব স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত।
“আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম না, তখনও খারাপ সময় গিয়েছে। তাই এটা নতুন কিছু নয়। আমি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোচ্ছি, আশা করি ফলাফল আসবে,” যোগ করেন তিনি।
সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজার মতো অভিজ্ঞ অধিনায়কদের অধীনে খেলার অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাতে চান লিটন। তাদের নেতৃত্বের গুণাবলিকে নিজের কৌশলের সঙ্গে মেলাতে চান এই তরুণ অধিনায়ক।
“সবাইয়ের কিছু না কিছু শেখার মতো গুণ ছিল। আমি চেষ্টা করব সেটা মাঠে ও মাঠের বাইরে প্রয়োগ করতে। এতে করে খেলোয়াড়দের কাছাকাছি যাওয়া যাবে এবং পারফরম্যান্সও বের করে আনা সহজ হবে,” বলেন তিনি।
টি-টোয়েন্টির চাহিদা অনুযায়ী দলের প্রস্তুতিও এগোচ্ছে বলে জানান লিটন। বিশেষ করে পাওয়ার হিটিং ও ডট বল কমানোর দিকেই জোর দিচ্ছেন তারা।
“টি-টোয়েন্টিতে বড় শট খেলতে হয়, কিন্তু ডট বলও ম্যাচ বদলে দিতে পারে। এই দুই দিকেই আমরা কাজ করছি,” জানান তিনি।
অভিজ্ঞতা, আত্মবিশ্বাস এবং ভবিষ্যতের দৃষ্টি নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন লিটন দাস। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই নতুন অধ্যায় কীভাবে পরিণতি পায়, তা সময়ই বলবে।
Leave a Reply