বর্তমানে সরকার একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে—যেকোনো সত্তা যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, তবে সরকার সেটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। এ সিদ্ধান্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর আওতায় নেওয়া হয়েছে, যার ধারা ১৮(ক) অনুযায়ী, যুক্তিসঙ্গত প্রমাণের ভিত্তিতে সরকারের গ্যাজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সত্তাকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করা যায়। এখানে ‘সত্তা’ বলতে কেবল সংগঠন নয়, বরং রাজনৈতিক দল, প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো গোষ্ঠীকেও বোঝানো হয়েছে।
এই ক্ষমতা সরকারের জন্য একরকম অবারিত ক্ষমতা, কারণ এটি প্রয়োগে বিচারিক অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। অতীতে এই আইন ব্যবহার করে বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠন যেমন হরকাতুল জিহাদ, হিযবুত তাহরির, জামাতে ইসলামি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। একইভাবে ছাত্রলীগকেও একসময় এই আইনের আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
বর্তমানে, ঠিক একই আইনি কাঠামোর অধীনে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এটি কার্যকর হলে, দলটির বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এবং দলটির সদস্য বা সমর্থকদের জন্য নতুন শর্ত আরোপিত হবে।
এই আইনের অধীনে কোনো ব্যক্তি যদি এই নিষিদ্ধ সত্তার পক্ষে কথা বলেন, প্রচারণা চালান, প্রোপাগান্ডা করেন বা সামাজিক মাধ্যমে সমর্থন জানান, তবে তাকেও অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হবে।
এর জন্য ন্যূনতম শাস্তি দুই বছর এবং সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড, সঙ্গে আর্থিক জরিমানাও হতে পারে।
এই আইনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—আইনটি প্রযোজ্য হবে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকে, অতীতে কেউ যদি ঐ সত্তার সঙ্গে যুক্ত থাকেন বা সমর্থন করেন, সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
তবে এ সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব গভীর। কারণ, এটি কেবল একটি দলের কার্যক্রম বন্ধ করে না, বরং পুরো রাজনৈতিক সত্তাকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দেয়। ফলে এটি কার্যত দলটির অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ধারা ৬-এ বলা হয়েছে, যে কোনো কর্মকাণ্ড যা রাষ্ট্রের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে এবং তা যদি হত্যা, গুরুতর আঘাত, অপহরণ, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে করা হয়—তবে তা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে।
এই আইনের পরিধি এতটাই বিস্তৃত যে, এর অপব্যবহারের সম্ভাবনাও রয়েছে। অতীতেও বিরোধী কণ্ঠ রোধ এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে এই আইনের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি সত্যিই আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে চায়, তবে তাদের উচিত হবে—এই প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, ন্যায়ভিত্তিক এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ মেনে পরিচালনা করা। কারণ আইনের কঠোরতা নয়, বরং ন্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধাই গণতন্ত্রের ভিত্তি।
Leave a Reply