ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, জলসম্পদ ভাগাভাগির ক্ষেত্রে দুই দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি—সিন্ধু পানি চুক্তি—স্থগিতই থাকছে। কাশ্মীরের পহেলগামে সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলার জেরে নয়াদিল্লির একতরফা এই সিদ্ধান্ত এখনও বহাল রয়েছে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে চারটি কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির আওতায় চুক্তিটি ফের চালুর কোনো আলোচনা হয়নি। ভারত সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, “পানি চুক্তি নিয়ে আমাদের অবস্থানে এখনো কোনো পরিবর্তন আসেনি।”
১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সিন্ধু ও এর উপনদীগুলোর পানির বণ্টন নির্ধারণ করে দেয়। চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব নদীর পানি ব্যবহার করে পাকিস্তান, আর ভারতের জন্য নির্ধারিত হয় বিয়াস, রাভি ও শতদ্রু।
তবে গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে ২৬ হিন্দু পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তান-ভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে নয়াদিল্লি এই চুক্তি কার্যত স্থগিত করে।
পাকিস্তান সরকার এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে এবং একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। ইসলামাবাদ বলছে, সিন্ধু চুক্তির আওতায় পাকিস্তানের কৃষি খাতের ৮০ শতাংশ সেচ নির্ভর করে এই পানির ওপর।
পাকিস্তানের পানি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “যুদ্ধবিরতি আলোচনার অংশ হিসেবে সিন্ধু পানি চুক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল না।” একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
কাশ্মীর হামলার প্রতিক্রিয়ায় নয়াদিল্লি শুধু পানি চুক্তিই নয়, পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য, ভিসা, সাংস্কৃতিক বিনিময়সহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। ভারত সরকারের অন্য দুই কর্মকর্তাও জানান, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আপাতত বহাল থাকছে।
এদিকে, শনিবার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া পোস্টে জানান, তার মধ্যস্থতায় রাতভর আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান ‘পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওও এক পোস্টে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে টানা ৪৮ ঘণ্টার আলোচনা শেষে এই গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এসেছে।”
যদিও গোলাগুলি আপাতত বন্ধ, কিন্তু নদী ও জলসম্পদের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা যে সহসা কমছে না, তা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
Leave a Reply