ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি বন্ধের পর দেশের বস্ত্রকলগুলোতে ১০-১৫ শতাংশ পর্যন্ত চাহিদা বাড়লেও তৈরি পোশাক খাত—বিশেষত নিট সেক্টর—অবশ্যই যেন এক নতুন সংকটের মুখে পড়েছে। উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, বাজারে চাহিদা বাড়ার সুযোগে সুতা প্রতি কেজিতে ৪৫ সেন্ট পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন দেশীয় কল মালিকরা।
অন্যদিকে বস্ত্রকল মালিকদের দাবি, তারা দাম নির্ধারণ করছেন না বরং বাজার চাহিদা ও সুনির্দিষ্ট মানের ওপর নির্ভর করেই মূল্য ওঠানামা করে।গত ১৩ এপ্রিল ভারত থেকে সুতা আমদানিতে স্থলপথে নিষেধাজ্ঞা জারির পর ৫০-৬০ কাউন্টের সুতার চাহিদা স্থানীয় বাজারে এক লাফে বেড়ে গেছে। তৈরি পোশাক খাতের বৃহৎ অংশ এই মানের সুতার ওপর নির্ভর করে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) বলছে, এর আগে ভারতীয় সস্তা সুতার কারণে স্থানীয় বাজারে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার সুতা অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে ছিল।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন,
ভারত থেকে জাহাজে করে সুতা আনলেও খরচ পড়ে ২ ডলার ৯০ সেন্ট। অথচ এখন আমাদের দেশেই সেই সুতা কিনতে হচ্ছে ৩ ডলার ৩৫ সেন্ট থেকে ৩ ডলার ৫০ সেন্ট দরে।”
এ অবস্থায়, জ্বালানি সংকটে বিদ্যমান উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় রফতানিযোগ্য পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।তবে সুতার মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ মানতে নারাজ বিটিএমএর সহ-সভাপতি সালেউদ জামান খান। তাঁর ভাষায়—
সুতা সবসময় নির্দিষ্ট মান অনুযায়ী তৈরি হয়। এর দাম আমরা নিজেরা ঠিক করি না, বরং বাজার চাহিদা অনুযায়ী ওঠানামা করে।”সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সুতা উৎপাদনে দেশের সক্ষমতা বাড়লেও সব ধরনের সুতা এখনো অভ্যন্তরীণভাবে তৈরি সম্ভব নয়। ফলে আমদানির প্রয়োজন থেকেই যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন,
“সুতা উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে জ্বালানির দাম যাতে আবার না বাড়ে, সেদিকেও নজর দেওয়া জরুরি।”
ভবিষ্যৎ করণীয় ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের দুই বৃহৎ শিল্প—বস্ত্র ও তৈরি পোশাক—যেন পরস্পরের প্রতিপক্ষ না হয়ে সহযোগী খাতে পরিণত হয়, সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
এছাড়া স্থলপথে আমদানি বন্ধ হওয়ায় স্থানীয় বাজার সম্প্রসারণের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা যেন যৌক্তিক মূল্য ও নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের মাধ্যমে কার্যকরভাবে কাজে লাগানো হয়।
সংক্ষেপে: সুতা উৎপাদনে দেশীয় সক্ষমতা বাড়লেও, বাজারে মূল্যনিয়ন্ত্রণ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে তৈরি পোশাক খাতের টেকসই প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়তে পারে—এমনই সতর্কবার্তা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
Leave a Reply